মণিপুরে কেসিপি (পিডব্লিউজি) দলের দুই সদস্য গ্রেপ্তার, চুরাচাঁদপুরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার

ইমফল, ৭ আগস্ট : মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনী পৃথক দুটি অভিযানে ৬ই আগস্ট নিষিদ্ধ কঙ্গ্লেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (পিপলস’স ওয়ার গ্রুপ) -কেসিপি (পিডব্লিউজি)-এর দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। একইদিনে, চুরাচাঁদপুর জেলার গথোল গ্রামে এক অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনা রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষত সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম এবং অপরাধমূলক তৎপরতা সম্পর্কে।

প্রথম গ্রেপ্তারটি ঘটেছে ইমফল পশ্চিম জেলার পাতসই থানার আওতাধীন ইউরেমবাম আওং লেইকাই এলাকায়। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছেন কঙ্গ্লেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (পিপলস’স ওয়ার গ্রুপ) এর সক্রিয় সদস্য লেইফ্রাকপাম হেরোজিত মৈতেই (৪১)। অভিযোগ রয়েছে যে, হেরোজিত মৈতেই চাঁদাবাজি করে জনসাধারণের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন, যাতে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যায়।

গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন এবং আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়, যা তার চাঁদাবাজি এবং সংগঠনের সঙ্গে তার যোগাযোগের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। নিরাপত্তা বাহিনী এ বিষয়ে আরও তদন্ত চালাচ্ছে এবং গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয় অভিযানে, নিরাপত্তা বাহিনী এক ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক অভিযানে ইমফল পূর্ব জেলার লামশাং থানার আওতাধীন আহাল্লুপ লাই হারাোফাম এলাকায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি হলো তাওথং মামাং লেইকাইয়ের বাসিন্দা, ২৯ বছর বয়সী ইঙ্গুদুম তুলারঞ্জন মৈতেই (আলিয়াস আবুং)।

মৈতেইকে গ্রেপ্তার করার পর তার কাছ থেকে একটি পকেট বই, ৮০ রুপি এবং একটি ভোটার আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মৈতেই ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে লামদেঙ খুনোতে এক চিকিৎসককে অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের সাথে জড়িত ছিল। এই ঘটনায় মৈতেই এবং তার সহযোগীরা চিকিৎসকের পরিবার থেকে টাকা দাবি করে, যা পরে মৈতেই নিজস্ব লাভের জন্য ব্যবহার করত।

এদিকে, চুরাচাঁদপুর জেলার গথোল গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর এক পৃথক অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে একটি একে ঘাটক রাইফেল (খালি ম্যাগাজিনসহ), দুটি ইমপ্রোভাইজড মরটার (পাম্পি), চারটি ইমপ্রোভাইজড রকেট বোম্ব, এবং উনিশটি ইমপ্রোভাইজড মরটার গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই অস্ত্রগুলি কঙ্গ্লেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (পিপলস’স ওয়ার গ্রুপ) বা অন্য কোনও সন্ত্রাসী সংগঠন দ্বারা ব্যবহার করা হতে পারে, যা রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।

পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী এই অস্ত্র ও বিস্ফোরকগুলি উদ্ধার করে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম রোধের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ধারকৃত সামগ্রীটি বিশেষভাবে রাজ্যের অস্ত্র আইন এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের প্রমাণ।

রাজ্য পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী একযোগে পুরো মণিপুরে সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ মোকাবিলার জন্য তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, পরবর্তী সময়ে আরও তল্লাশি এবং অভিযানের মাধ্যমে রাজ্যের অস্থিতিশীল এলাকাগুলোতে অভিযান চালানো হবে। নিরাপত্তা বাহিনী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার লক্ষ্যে চলমান অভিযান আরও তীব্র করবে।

পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “এই ধরনের অভিযানের মাধ্যমে আমরা রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

এদিকে, মণিপুরের জনসাধারণের মধ্যে এই গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র উদ্ধারের খবর নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম আরও তীব্র এবং গতিশীল হতে হবে। রাজ্যের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদী ও চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড রোধ করতে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।