গুয়াহাটি, ৭ আগস্ট : অসম তথা সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থাপত্য ও পরিবহন পরিকাঠামোর ইতিহাসে এক গর্বজনক অধ্যায় রচিত হল। গুয়াহাটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সদ্য নির্মিত টার্মিনাল ২ বিশ্ববিখ্যাত আন্তর্জাতিক স্থাপত্য পুরস্কার ২০২৫-এ পরিবহন বিভাগে সেরা স্থাপত্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এই পুরস্কার উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ ও স্বীকৃতির এক অনন্য নিদর্শন।
এই সম্মানজনক পুরস্কার ঘোষণার সময়, গুয়াহাটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেড এক বিবৃতিতে জানায় যে, টার্মিনাল ২ শুধুমাত্র একটি আধুনিক যাত্রী টার্মিনাল নয়, এটি অঞ্চলটির প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি হিসেবেও দাঁড়িয়ে আছে। টার্মিনালের নকশায় স্থানীয় উপাদান ও প্রেরণার সম্মিলন ঘটিয়ে এক অনন্য পরিবেশ-সচেতন স্থাপত্য তৈরি করা হয়েছে।
টার্মিনালের স্থাপত্যিক নকশা তৈরি হয়েছে বাঁশের দৃঢ়তা এবং ফক্সটেইল অর্কিড ফুলের সৌন্দর্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। বাঁশ প্রতীক হিসেবে ধরা হয়েছে শক্তি, স্থিতিশীলতা ও টেকসই জীবনের; অন্যদিকে ফক্সটেইল অর্কিডের কোমলতা ও সৌন্দর্য প্রতিফলিত করেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের সংস্কৃতির সূক্ষ্মতা ও ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্যবোধকে। এই নকশা কেবলমাত্র দৃষ্টিনন্দন নয়, বরং তা জীববৈচিত্র্য, পরিবেশবান্ধব নীতি ও স্থানীয় ঐতিহ্যের এক সফল মেলবন্ধন।
জিআইএএল -এর মতে, নতুন এই টার্মিনালটি শুধুই একটি ট্রানজিট পয়েন্ট নয় বরং এক সাংস্কৃতিক প্রবেশদ্বার, যেখানে আগত যাত্রীরা প্রথম পা রেখেই উত্তর-পূর্ব ভারতের আত্মা ও স্বরূপের সংস্পর্শে আসবেন। ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করবে, যেখানে যাত্রার শুরুতেই তারা স্থানীয় সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও স্থাপত্যের মিশ্রণ উপভোগ করতে পারবেন।
ইন্টারন্যাশনাল আর্কিটেকচারাল অ্যাওয়ার্ড হল স্থাপত্য জগতের এক অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মান, যা প্রতি বছর বিশ্বের সেরা নকশা, স্থাপত্য উদ্ভাবন ও টেকসই পরিকাঠামো নির্মাণে কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয়। এই পুরস্কার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নকশা সংস্থা, স্থপতি এবং প্রকল্পগুলিকে বিচার করে নান্দনিকতা, উদ্ভাবন এবং পরিবেশ সচেতনতা—এই তিনটি মানদণ্ডে মূল্যায়ন করে।
এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু গুয়াহাটি বা অসমের জন্য নয়, বরং সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য এক উল্লেখযোগ্য অর্জন। এই অঞ্চলে পর্যটন, যোগাযোগ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের যে প্রচেষ্টা চলেছে, এই পুরস্কার তার একটি প্রামাণ্য স্বীকৃতি। এই ধরনের স্থাপত্যিক সাফল্য ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্ব ভারতে আরও আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা যায়।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, পরিবেশ-সচেতন এবং স্থানীয় ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি এই ধরনের অবকাঠামোই আগামী দিনের স্থায়ী উন্নয়নের মডেল। গুয়াহাটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ২ সেই ভবিষ্যতের এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এখন শুধু যাত্রা নয়, গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হবে এক সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত এই স্থাপত্যকর্ম ভারতের বিমানবন্দর নির্মাণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করল।

