নয়াদিল্লি, ৬ আগস্ট : বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (সার) প্রক্রিয়ার সময় স্বচ্ছতা ছাড়াই ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট বুধবার নির্বাচন কমিশনকে (ইসিআই) ৯ আগস্টের মধ্যে বিস্তারিত জবাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি সুর্য কান্ত, উজ্জ্বল ভূঁইয়া ও এন কোটিশ্বর সিংয়ের বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করেছে। গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য কাজ করা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) মামলাটি করেছে ।
সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত এডিআর-র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, নির্বাচন কমিশন যেসব ভোটারদের নাম বাদ দিয়েছে তাদের পরিচয় স্পষ্ট করা হয়নি। বাদ পড়া ব্যক্তিরা মৃত না কি স্থানান্তরিত, সে বিষয়েও কোনও তথ্য নেই। এছাড়াও, রাজনৈতিক দলগুলিকে ব্লক স্তরে তালিকা দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বহু ক্ষেত্রে বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) সুপারিশ ছাড়াই নাম অন্তর্ভুক্ত বা বাদ দেওয়া হয়েছে। দুইটি বিধানসভা কেন্দ্রের উদাহরণ টেনে ভূষণ বলেন, ১২% এন্ট্রিতে বিএলও-র স্বাক্ষর পর্যন্ত নেই। বেঞ্চ জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী খসড়া ভোটার তালিকা রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্লক স্তরে ভাগ করে নেওয়া উচিত। আদালত প্রশ্ন তোলেছে, এই তালিকা রাজনৈতিক দলগুলিকে আদৌ দেওয়া হয়েছিল কিনা।
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী আদালতে জানান, খসড়া তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গেও ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। আদালত তখন বলে, তাহলে লিখিত জবাবে সেটি স্পষ্ট করে দিন। সেই সঙ্গে তালিকা কাদের দেওয়া হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে আদালতে জমা করুন।
আদালত বলেছে, প্রতিটি ভোটারকে সঠিকভাবে তথ্য দেওয়া ও তাদের মতামত জানানোর সুযোগ থাকা উচিত। রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও এই তথ্য থাকা জরুরি। মামলার পরবর্তী শুনানি ১২ আগস্ট ধার্য্য করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই বছরের ২৪ জুন নির্বাচন কমিশন ‘রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর ধারা ২১(৩) অনুসারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (সার) প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এডিআর এবং অন্যান্য আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচন কমিশন যে ১১টি নির্দিষ্ট নথি (যেমন জন্ম সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, বাসস্থানের প্রমাণপত্র ইত্যাদি) চেয়েছে, তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। আবেদনকারীরা আরও প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন কমিশন নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ক্ষমতা রাখে কিনা। কারণ এই দায়িত্ব মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পড়ে।
এই ইস্যুতে ‘ইন্ডি’ জোটের বিরোধী দলগুলি সংসদে প্রতিবাদ জোরদার করেছে। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, তৃণমূল কংগ্রেস ও শিবসেনা (উদ্ধব) সহ ৮টি দল লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়ে এই বিষয়ে বিশেষ আলোচনা চেয়েছে।
তাঁদের দাবি, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই ধরনের সংশোধন “অভূতপূর্ব” এবং এর গভীর রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। বিরোধীদের মতে, এই প্রক্রিয়াটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার কেড়ে নিতে পারে। তবে সরকার বলেছে, বিরোধীরা নির্বাচনী সংস্কারের ইস্যুতে অহেতুক রাজনীতি করছে।
গত ২৮ জুলাই শীর্ষ আদালত খসড়া তালিকা প্রকাশে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করলেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে বলেছিল, এই প্রক্রিয়ায় গণহারে বাদ দেওয়ার পরিবর্তে, গণহারে অন্তর্ভুক্তির দিকেই নজর দেওয়া উচিত। আধার বা এপিক-কে প্রামাণিক দলিল হিসেবে ধরা যেতে পারে। জাল নথি থাকলে, তা ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা উচিত।

