ফ্লোরিডায় টেসলার বিরুদ্ধে ২৪৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ, অটোপাইলট প্রযুক্তি ব্যর্থতার কারণে যুবতীর মৃত্যু

মিয়ামি, ৫ আগস্ট : ফ্লোরিডার একটি জুরি সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছে, যেখানে ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে ২৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলাটি ২০১৯ সালে ঘটে যাওয়া একটি মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার সাথে জড়িত, যেখানে ২২ বছর বয়সী নাইবেল বেনাভিদেস লিওন নামে এক তরুণী নিহত হন। দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত ছিল টেসলার মডেল এস সেডান, যার ড্রাইভার-সহায়তা প্রযুক্তি ‘অটোপাইলট’ সক্রিয় ছিল। এই মামলায় অভিযোগ ছিল যে, টেসলার অটোপাইলট সিস্টেম দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে, যা প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলে ধরেছে।

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লোরিডার কি লারগোর কাছে জর্জ ম্যাগি নামের এক ব্যক্তি ২০১৯ সালের একটি টেসলা মডেল এস চালাচ্ছিলেন। গাড়িতে তখন অটোপাইলট চালু ছিল। ম্যাগি দুর্ঘটনার সময় ফোন পড়ে যাওয়ায় তা তোলার জন্য নিচু হন এবং এই কারণে তার মনোযোগ রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়। গাড়িটি এক্সিকিউটিভ জংশনে পার্ক করা একটি শেভ্রোলেট তাহো গাড়ি শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। ঐ সময় ম্যাগি না ব্রেক করেন, না গাড়ি মোড়ান। ফলে গাড়িটি রাস্তার পাশে দাঁড়ানো দম্পতিকে ধাক্কা দেয়। ২২ বছর বয়সী নাইবেল বেনাভিদেস লিওন ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর তার প্রেমিক ডিলন অ্যাঙ্গুলো গুরুতর আহত হন।

বাদীপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন যে, টেসলার অটোপাইলট প্রযুক্তি সঠিকভাবে স্থির যানবাহন শনাক্ত করতে পারে না, বিশেষ করে সিগন্যালযুক্ত চৌরাস্তা বা নিয়ন্ত্রিত এক্সেস হাইওয়ে ছাড়া অন্যান্য রাস্তার জন্য এটি উপযুক্ত নয়। তদুপরি, তারা অভিযোগ করেন যে টেসলা প্রযুক্তির দক্ষতা সম্পর্কে অতিরিক্ত ভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, ব্যবহারকারীরা ভুল ধারণায় গাড়ি চালিয়েছেন, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

অন্যদিকে, টেসলা মামলা চলাকালে জোর দিয়েছিল যে, দুর্ঘটনার জন্য মূলত ড্রাইভারের অমনোযোগ এবং ভুল ছিল দায়ী। ম্যাগি দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে ফোন খুঁজছিলেন এবং তিনি ৪৫ মাইল প্রতি ঘণ্টার সীমা অতিক্রম করে প্রায় ৬২ মাইল প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। টেসলা তাদের প্রযুক্তির উপর আস্থা রেখে বলেছে, এমন পরিস্থিতিতে অন্য কোনও গাড়িও এই দুর্ঘটনা এড়াতে পারত না। তারা আরও যুক্তি দিয়েছে যে, তাদের গাড়ি সংশ্লিষ্ট সকল নিরাপত্তা মান পূরণ করে।

জুরির রায়ে টেসলাকে দুর্ঘটনার জন্য ৩৩ শতাংশ দায়ী করা হয়েছে, আর গাড়ি চালককে ৬৭ শতাংশ দায়ী মনে করা হয়েছে। যদিও চালক মামলায় বাদী ছিলেন না, তাই তাকে আর্থিক দায়বদ্ধতা বহন করতে হয়নি। ক্ষতিপূরণের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার দণ্ডমূলক ক্ষতিপূরণ এবং ৪৩ মিলিয়ন ডলার সাধারণ ক্ষতিপূরণ রয়েছে।

এই রায় টেসলার অটোপাইলট এবং ফুল সেল্ফ-ড্রাইভিং (এফএসডি) প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি স্বয়ংক্রিয় ও আধা স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তির নিরাপত্তা ও ব্যবহারকারীর সুরক্ষা নিয়ন্ত্রণে নতুন কঠোরতা আরোপের দিক নির্দেশ করবে। এছাড়াও, এটি অন্যান্য অটোমেকার ও প্রযুক্তি সংস্থার জন্য আইনি দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

রায় ঘোষণার পর টেসলা তাদের ভুল প্রমাণ করতে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা দাবি করেছে, এই দুর্ঘটনার জন্য কোম্পানির প্রযুক্তিকে দায়ী করা অনুচিত এবং তারা তাদের প্রযুক্তির নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতার প্রতি বিশ্বাস রাখে। আপিল প্রক্রিয়া চলাকালে টেসলা এই রায়ের কার্যকরী প্রভাব সীমিত করার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।