ইম্ফল, ৫ আগস্ট:মণিপুর রাজ্যে চলমান উত্তেজনা ও নিরাপত্তা সংকটের প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা বাহিনী আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই প্রেক্ষিতে ৪ আগস্ট থৌবাল জেলার হাওখা মানিং লেইকাই এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন পিপল’স রেভল্যুশনারি পার্টি অফ কাংলাইপাক-এর একজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম পাঙ্গামবম কেপ্টেন সিং ওরফে সচিকান্ত (৫১)। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই প্রেপাক-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয় এবং তাঁর কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি সিম কার্ড এবং একটি আধার কার্ড জব্দ করা হয়েছে। এই গ্রেফতারকে নিরাপত্তা বাহিনী একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে, কারণ জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্রিয় কার্যকলাপ সম্প্রতি রাজ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজ্য পুলিশ ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নেও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। ৩ আগস্ট পুলিশ তিনটি যানবাহন আটক করে যেগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা নম্বর প্লেট ছিল না। এ ছাড়াও, মোট ১৮টি গাড়ি থেকে অবৈধভাবে লাগানো টিন্টেড ফিল্ম (কালো কাচ) সরানো হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চালানো এই তল্লাশি অভিযান চলমান থাকবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মণিপুরের বেশ কয়েকটি জেলা, বিশেষ করে প্রান্তিক ও সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাহিনী এলাকা দখল ও সার্চ অপারেশন পরিচালনা করছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের অভিযান জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অপরদিকে, জাতীয় সড়ক ৩৭-এ ৪১৭টি গাড়ির নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ওষুধপত্র পরিবহন নিশ্চিত করতে কনভয় মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজ্য জুড়ে নিরাপত্তা তদারকি আরও জোরদার করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ি ও সমতল উভয় জেলাতেই মোট ১১১টি চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব চেকপয়েন্টে তল্লাশি ও নজরদারির কাজ চালানো হচ্ছে। তবে সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব চেকপয়েন্টে কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হয়নি, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি স্বস্তির খবর।
মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরে চলমান জাতিগত ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই ধরনের নিরাপত্তা তৎপরতা প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রেপাক-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ যে সক্রিয় রয়েছে, তা একাধিক অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
জনগণকে আইন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

