আসামের প্রাক্তন আইএএস অফিসার সেওয়ালি দেবী শর্মার বিরুদ্ধে ইডি-র তল্লাশি, ১১৫ কোটির আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ

গুয়াহাটি, ৫ আগস্ট : আসামের প্রাক্তন আইএএস অফিসার সেওয়ালি দেবী শর্মার বিরুদ্ধে আয়-বহির্ভূত সম্পত্তির মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তদন্ত শুরু করেছে। মঙ্গলবার ইডি গুয়াহাটির আটটি ঠিকানায়, যার মধ্যে শর্মা এবং তার ঘনিষ্ঠদের বাসভবনও রয়েছে, একযোগে তল্লাশি অভিযান চালায়। এই অভিযান থেকে শর্মার বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক অনিয়মের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নির্দেশে গঠিত একটি বিশেষ ভিজিল্যান্স সেলের এফআইআর থেকে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, শর্মার বিরুদ্ধে প্রায় ৫.৭ কোটি টাকার আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি থাকার অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ইডি অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন-এর অধীনে তদন্ত শুরু করে।

ইডি-র প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শর্মা যখন অসম স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এর এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন, তখন তিনি ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন-এর অধীনে দুই বছরের একটি ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন প্রোগ্রামের বাস্তবায়নে দুর্নীতি করেন। রাজ্য সরকার যেখানে মাত্র ৫৯টি প্রতিষ্ঠান এবং ২৭,৮৯৭ জন প্রশিক্ষণার্থীর অনুমোদন দিয়েছিল, সেখানে শর্মা নিজে থেকেই ৩৪২টি স্টাডি সেন্টার খোলেন এবং ১,০৬,৮২৮ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করিয়ে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন।

তদন্তে আরও জানা যায়, তিনি এসসিইআরটি-এর ওপেন অ্যান্ড ডিসট্যান্স লার্নিং সেল-এর নামে পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, যেখানে তিনি একমাত্র স্বাক্ষরকারী ছিলেন। এই পদক্ষেপ অসম ফিনান্সিয়াল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫-এর পরিপন্থী। অভিযোগ, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ১০৫ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করেছেন।

শুধু তাই নয়, ইডি জানায়, শর্মা তার জামাই, মেয়ে এবং অন্যান্য ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে নিয়ম না মেনে কোটি কোটি টাকার সরকারি চুক্তি দিয়েছিলেন। এমনকি, একটি সংস্থার অডিটরের দায়িত্বে থাকা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সারং মোরেকেও চুক্তি দেওয়া হয়, যা স্বজনপোষণের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এই সব চুক্তির ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান বা বিজ্ঞাপন দেওয়ার কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি, যা সরকারি নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন।

ইডি আরও জানায়, যেসব সংস্থাকে এই কাজগুলো দেওয়া হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগেরই কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। এমনকি বহু ক্ষেত্রে কাজ অসম্পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও তাদের সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে, রশিদ বা সঠিক যাচাইকরণের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করেই।

বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এই আইএএস অফিসারের পক্ষ থেকে ইডি-র তল্লাশি বা অভিযোগ সম্পর্কে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ইডি জানিয়েছে, তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও তথ্য উঠে আসতে পারে। এই মামলাটি আসাম সরকারের প্রশাসনে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার দৃষ্টান্ত হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।