নয়াদিল্লি, ৪ আগস্ট : ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারত জোড়ো যাত্রার সময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর করা মন্তব্য নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন প্রকৃত ভারতীয় এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। তবে আদালত এই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মানহানির মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ জারি করেছে।
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ রাহুল গান্ধীর বক্তব্য এবং তা প্রকাশের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেছে। আদালত জানতে চেয়েছে, আপনাকে এই কথা মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে বলতেই বা পোস্ট করতেই হল কেন? আপনি কি সেখানে ছিলেন? আপনি কিভাবে জানলেন ২,০০০ বর্গকিমি দখল হয়েছে?
উল্লেখ্য, গান্ধী তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রার সময় দাবি করেছিলেন, চীনা সেনা ভারতের ২,০০০ বর্গকিমি জমি দখল করেছে, ২০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়েছেন এবং অরুণাচলে আমাদের জওয়ানদের মারধর করা হয়েছে। এই মন্তব্যের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে একটি ফৌজদারি মানহানি মামলা দায়ের হয়।
রাহুল গান্ধীর পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি যুক্তি দেন, সাংসদ হিসেবে তিনি সংবিধানের ১৯(১)(ক) ধারায় প্রদত্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করেন। তিনি বলেন, একজন সাংসদ হওয়া মানে এই স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া যায় না। গান্ধীর মন্তব্য জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে মিডিয়াকে প্রশ্ন তোলার জন্য ছিল।
তবে আদালত এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়নি। বেঞ্চ জানায়, আপনারা ১৯(১)(ক) ধারা বলেই যান, কিন্তু বিরোধী দলের নেতা হিসেবে এমন উত্তেজক মন্তব্য সীমান্ত সংঘর্ষের সময় কি আদৌ করা উচিত? আদালত পরামর্শ দিয়েছে, এই ধরনের সংবেদনশীল মন্তব্য সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত, না যে কোনও মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বা সামাজিক মাধ্যমে। বিচারপতিরা বলেন, আপনার যদি কিছু বলার থাকে, তাহলে আপনি কেন তা সংসদে বলেন না? কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কথা বলেন?
গান্ধীর আবেদনে মূল আইনি প্রশ্নগুলির মধ্যে ছিল, নিম্ন আদালতের সমন জারি করার আগে তাঁকে শোনা হয়নি। এই বিষয়টি এলাহাবাদ হাইকোর্ট গুরুত্ব দেয়নি বলে সিংভি দাবি করেন। বেঞ্চ জানায়, এই বিষয়গুলি পর্যালোচনার জন্য উন্মুক্ত এবং তিন সপ্তাহ পরে সব পক্ষের আপত্তি শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, মামলার মূল আবেদনকারী অবসরপ্রাপ্ত বিআরও (সীমান্ত সড়ক সংস্থা) পরিচালক উদয় শঙ্কর শ্রীবাস্তব অভিযোগ করেন, গান্ধীর মন্তব্য ভারতীয় সেনাকে মানহানিকরভাবে উপস্থাপন করেছে এবং জওয়ানদের মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্যেই এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মন্তব্য করা হয়। তাঁর দাবি, অরুণাচল প্রদেশের ইয়াংৎসে সীমান্ত সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, চীনা বাহিনীকে সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে।
মামলার আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, গান্ধীর মন্তব্য ইচ্ছাকৃত এবং বিভ্রান্তিকর। যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও সেনাবাহিনীর মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট গত ২৯ মে তাঁর আবেদনে স্বস্তি না দিয়ে জানায়, গায়ে পড়ে এফআইআর করা হয়নি এবং প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ইঙ্গিত দিয়েছে, আদালত এই মামলার সাংবিধানিক এবং আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখতে আগ্রহী। শুনানি তিন সপ্তাহ পরে ফের শুরু হবে।

