ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ ও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে তীব্র মন্তব্য

নয়াদিল্লি, ৩১ জুলাই : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও রাশিয়া সম্পর্কের বিষয়ে এক তীব্র মন্তব্য করেছেন। একদিন আগে ভারত থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর, তিনি আরও একধাপ এগিয়ে ভারত এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি পোস্টে জানান, তিনি ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করেন না এবং বলেছেন, “তারা তাদের মৃত অর্থনীতিগুলো একসাথে ডুবিয়ে দিতে পারে, আমার কিছু যায় আসে না।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্য তার প্রশাসনের ভারত-বিষয়ক নীতি ও কৌশল নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “আমরা ভারতে খুব কম ব্যবসা করি, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি, পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় কোনও বাণিজ্য নেই। চলুক এমনই।”

এছাড়াও, ট্রাম্প রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের প্রতি কটাক্ষ করেছেন, যিনি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সশব্দ বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, “মেদভেদেভ, যে কখনও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিল, তার কথাবার্তা সাবধানে বলবে। সে বিপজ্জনক অঞ্চল অতিক্রম করছে।”

ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের বিষয়ে আরও বক্তব্য রেখে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন যে ভারত দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া থেকে প্রায় সমস্ত সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। “ভারত রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি ক্রেতা, চীনসহ, এমন সময়ে যখন পশ্চিমী বিশ্বের অনেক দেশ চায় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করুক,” তিনি বলেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্য ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি এবং এর প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করছি। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরে একটি সুষম, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা এই লক্ষ্যেই কাজ চালিয়ে যাব।”

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, সরকার দেশের কৃষক, উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে, যেমনটি পূর্ববর্তী বাণিজ্য চুক্তি, যেমন যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্প্রতি হওয়া সর্বব্যাপ্ত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে, ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে একটি তেল চুক্তির বিষয়ে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা পাকিস্তানকে সহায়তা করতে এক চুক্তি সম্পাদন করেছি, যেখানে পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে পাকিস্তানের বিশাল তেল খনিজ সম্পদ বিকাশে কাজ করবে।” এই চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও কোনও মন্তব্য না আসলেও, এটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় রয়েছে।

বর্তমানে ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক চরম সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে পেহালগাম সন্ত্রাসী হামলার পর। এই হামলা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শোচনীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং এর ফলে দুই দেশের মধ্যে আগের যে অস্থির সম্পর্ক ছিল তা আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য, বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও বিশেষ অবস্থান নেয়ার প্রতিক্রিয়া হিসাবে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই কঠোর মন্তব্য ও শুল্ক আরোপ ভারতের সঙ্গে তার প্রশাসনের সম্পর্কের নতুন মূর্তিতে তুলে ধরছে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এলেও, এই নতুন উত্তেজনা দুই দেশের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন উঠিয়েছে। বিশেষত, রাশিয়া এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ভারতকে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।