জম্মু-কাশ্মীরে ভারতের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পর নতুন মাত্রা

শ্রীনগর, ৩১ জুলাই : সিন্ধু জলচুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করার কয়েক সপ্তাহ পর ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের চেনাব নদীর ওপর দেশের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করতে চলেছে। এটি একটি বিশাল ১৮৫৬-মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যা চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনো ‘আপত্তি নেই’ সনদ (নো অবজেকশন) না নিয়েই নির্মিত হবে।

ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন সাওয়ালকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বুধবার, এনএইচপিসি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বিডিং এর ভিত্তিতে এই প্রকল্পের জন্য বিড আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিড জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হল ১০ সেপ্টেম্বর। এই প্রকল্পটি এনএইচপিসি এবং জম্মু ও কাশ্মীর বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্পোরেশনের একটি যৌথ উদ্যোগ।

১৯৮০-এর দশকে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু গত ৪০ বছর ধরে এটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। পদ্ধতিগত বিলম্ব ছাড়াও, পাকিস্তান এই বাঁধের কারণে চেনাব নদীর প্রবাহে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে এর নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছিল।

এই মেগা প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে নির্মিত হবে এবং এর আনুমানিক ব্যয় ২২,৭০৪ কোটি টাকা।

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ঘোষণা করেছিল যে, পাকিস্তান যতক্ষণ না সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে, ততক্ষণ সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত থাকবে।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুসারে, ভারত বিয়াস, শতদ্রু এবং রাভি নদীর জলের উপর নিরঙ্কুশ অধিকার রাখে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব নদীর জলের উপর অধিকার রয়েছে।

তবে, সীমিত সেচ ব্যবহারের পাশাপাশি, ভারত এই নদীগুলিতে ‘রান-অফ-দ্য-রিভার’ প্রকল্প তৈরি করতে পারে। কিন্তু এর জন্য প্রকল্পের নকশা এবং উচ্চতা নিয়ে সিন্ধু জল কমিশনের ছাড়পত্র প্রয়োজন।

এই প্রকল্পের কারণে প্রায় এক ডজন গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শত শত পরিবারকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার বিষয়টি প্রকল্পের অংশ।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, জেএন্ডকে স্টেট পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এক দশক আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল এবং প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালে, কেন্দ্রীয় শাসনের সময় এনএইচপিসি-কে এই প্রকল্পে যুক্ত করা হয়। একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে এনএইচপিসি-কে অধিকাংশ শেয়ারহোল্ডার করা হয়। স্মারক অনুযায়ী, এটি একটি বুট মডেল (বিল্ড, ওন, অপারেট এবং ট্রান্সফার) হবে এবং ৪০ বছর পর জেএন্ডকে সম্পূর্ণভাবে প্রকল্পটি ফেরত পাবে।

দরপত্র আহ্বানের আগে, সরকার কৌশলগত গুরুত্বের এই প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিডিং এবং নির্মাণে বেশ কিছু বাধা অপসারণ করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন উপদেষ্টা কমিটি প্রকল্পের নির্মাণের জন্য প্রায় ৩০০০ একর সংরক্ষিত বন এবং জঙ্গল ঝারি জমি হস্তান্তরের অনুমোদন দিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের এই পদক্ষেপ সিন্ধু জল চুক্তি এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর কী প্রভাব ফেলে, তা দেখতে কূটনৈতিক ও আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।