নয়াদিল্লি, ৩১ জুলাই : এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা বহুল চর্চিত ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় বড়সড় রায় দিল বিশেষ এনআইএ (জাতীয় তদন্ত সংস্থা) আদালত। বৃহস্পতিবার আদালত বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত-সহ মোট সাত অভিযুক্তকেই সমস্ত অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে।
আদালত জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ), অস্ত্র আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির (IPC) অধীনে আনা অভিযোগ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়নি। সেই কারণে তাদের মুক্তি দেওয়া হল।
২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহরের ভিক্কু চৌক মসজিদের কাছে একটি মোটরসাইকেলে রাখা বিস্ফোরক ফেটে যায়। পবিত্র রমজান মাসে এবং হিন্দু উৎসব নবরাত্রির ঠিক আগে হওয়া ওই বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু হয় এবং আহত হন শতাধিক মানুষ। মালেগাঁও একটি সংবেদনশীল সাম্প্রদায়িক এলাকা হওয়ায় ঘটনাটি তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।
প্রায় ১৭ বছর ধরে চলা এই মামলায় অবশেষে রায় দিল আদালত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সব অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল এবং রায় ঘোষণার সময় তারা সকলেই উপস্থিত ছিলেন। একই সঙ্গে আদালত নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এই মামলার চার্জশিট ও অন্যান্য নথিপত্র মিলিয়ে পুরো বিষয়টি এক লক্ষেরও বেশি পৃষ্ঠার দলিলপত্রে পরিণত হয়। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল মামলার জটিলতা ও বিস্তৃত তথ্যাদি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শুনানি শেষ হয় এবং ১৯ এপ্রিল আদালত রায় সংরক্ষণ রেখেছিল। তারপর বিচারক সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
বিচার চলাকালীন সময়ে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে মোট ৩২৩ জন সাক্ষীকে হাজির করা হয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে ৩৪ জন সাক্ষী নিজেদের আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে ‘পক্ষ পরিবর্তন’ করেন। ফলে মামলার ভিত্তি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রথমে মামলার তদন্ত করেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস)। তারাই অভিযুক্তদের গ্রেফতার এবং মূল চার্জশিট দাখিল করেছিল। পরে ২০১১ সালে এই মামলার তদন্তভার নেওয়া হয় জাতীয় তদন্ত সংস্থার হাতে। ২০১৬ সালে এনআইএ একটি সম্পূরক চার্জশিট পেশ করে। ওই চার্জশিটে তারা সাধ্বী প্রজ্ঞা ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আনা সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের ধারাগুলো প্রমাণে অক্ষমতার কথা জানায় এবং অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করে।
সব অভিযুক্ত বিচার চলাকালীন জামিনে মুক্ত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, হত্যা এবং বিস্ফোরক ব্যবহারের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল। আজকের এই রায়ের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত মামলার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হল।

