২০২১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিদেশ সফরে ব্যয় প্রায় ২৯৫ কোটি টাকা, ২০২৫-এ আরও ৬৭ কোটি: কেন্দ্রের তথ্য রাজ্যসভায় উপস্থাপন

নয়াদিল্লি, ২৫ জুলাই : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফর নিয়ে কেন্দ্র সরকার রাজ্যসভায় এক বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে, যেখানে জানানো হয়েছে যে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তাঁর বিদেশ সফরের জন্য মোট ২৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পাঁচটি দেশের সফরের জন্য আরও প্রায় ৬৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এই তথ্য বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কির্তি বর্ধন সিং।

২০২৫ সালে প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। ফ্রান্স সফরে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে— প্রায় ২৫.৫৯ কোটি। যুক্তরাষ্ট্র সফরে খরচ হয়েছে ১৬.৫৪ কোটি, সৌদি আরবে ১৫.৫৪ কোটি, থাইল্যান্ডে ৪.৯২ কোটি এবং শ্রীলঙ্কা সফরে ৪.৪৬ কোটি টাকা। তবে এই বছর আরও যেসব দেশে তিনি সফর করেছেন যেমন মরিশাস, সাইপ্রাস, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও নামিবিয়া— সেসব সফরের ব্যয় এখনো চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়নি। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ওই সফরগুলোর জন্য বিল এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর চারটি দেশের সফরে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩৬ কোটি, যার মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্র সফরের খরচই ছিল ১৯.৬৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালে খরচ হয় ৫৫.৮২ কোটি, ২০২৩ সালে ৯৩ কোটি এবং ২০২৪ সালে ১৬টি দেশের সফরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০৯ কোটি টাকা। প্রতিটি সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ, ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালে ১৬টি দেশের সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গিয়েছেন ১৪৫ জন কর্মকর্তা। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ জন করে, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় ১৬ জন করে, সৌদি আরব ও মরিশাসে ১১ জন করে, এবং অন্যান্য দেশে ১৩ থেকে ১৫ জনের প্রতিনিধিদল সফর করেছেন। তুলনায় ২০২৩ সালে ৮৫ জন, ২০২২ সালে ৮৪ জন এবং ২০২১ সালে মাত্র ৪১ জন কর্মকর্তা চারটি দেশের সফরে অংশ নেন।

২০২৩ সালে মিশর সফরের সময় প্রচার ও সম্প্রচারের জন্য ১১.৯০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। মোদীর এই সব সফর নিয়ে সরকারের বক্তব্য, এগুলোর মাধ্যমে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। তবে বিপরীতে বিরোধী দলগুলোর প্রশ্ন, এই বিপুল খরচের ব্যয়বহুলতা কতটা প্রয়োজনীয় ছিল এবং এর বাস্তব ফলাফল কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক ক্রমেই জোরাল হচ্ছে।