ঢাকা, ২৩ জুলাই : রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর, নিহত ও নিখোঁজদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যক্ষ নিজেই।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মোঃ মাসুদ আলম, প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আখতার, সমন্বয়কারী লুতফুন্নেসা লোপা, অভিভাবক প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মোল্লা (ছাত্রী: জাইমা জাহান, শ্রেণি: চতুর্থ, ক্লাস কোড: ২২৭৮), এবং দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থী মারুফ বিন জিয়াউর রহমান ও মোঃ তাসনিম ভূঁইয়া প্রতীক।
কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটি নিহত ও নিখোঁজদের নাম ও ঠিকানাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্বে রয়েছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য শেয়ার করেছেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনাবশত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভবনে আঘাত হানে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের মধ্যে বহুজন ঘটনাস্থলেই নিহত ও আহত হন।
ঘটনার পর থেকে নিহত ও আহতদের পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মঙ্গলবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ৪৩ জন—যাদের অধিকাংশই শিশু—চিকিৎসাধীন রয়েছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে।
বুধবার সকালে ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, করিডোরজুড়ে কান্নার রোল। কেউ মেঝেতে বসে, কেউবা কাঁচের দরজা দিয়ে চোখ মেলে খুঁজছেন প্রিয়জনকে। কেউ কেউ ওয়ার্ড আর আইসিইউর মাঝে বারবার ছুটে যাচ্ছেন সন্তানের সেবার খোঁজে।
ইনফেকশন ঠেকাতে এবং চিকিৎসার মান বজায় রাখতে ওয়ার্ডে প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। খাবার থেকে শুরু করে সামান্য সান্ত্বনার কথাও দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছেন আহত শিশুদের কাছে।
হাসপাতালের বাইরের পরিবেশ ভারী—আত্মীয়স্বজনদের কান্না, আর্তনাদ ও প্রার্থনায় আচ্ছন্ন।
একজন অভিভাবক বলেন, “যে শিশু দুপুরে বাড়ি ফিরে খাবে বলে বের হয়েছিল, সে আজ আগুনে ঝলসে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছে। কিভাবে এই যন্ত্রণা সহ্য করব?”
অন্য এক অভিভাবক, সাইদুর রহমান, যিনি আইসিইউ থেকে বের হচ্ছিলেন, বলেন, “অনেক শিশুর শরীরের ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ দগ্ধ। শুধু সৃষ্টিকর্তার কৃপা ছাড়া তাদের বাঁচার আশা নেই।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই মৃত্যুর দায় কার? সরকার কীভাবে এর জবাব দেবে? আর দিলেও কি সেই শিশুদের কেউ ফিরে আসবে?”
অনেক অভিভাবক শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি স্কুলও নিরাপদ না হয়, তবে আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ জায়গা কোথায়? আমাদের কি দেশ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই?” এই দুর্ঘটনা শুধু প্রাণনাশ নয়, জাতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে

