অখিলেশ-ডিম্পলের মসজিদ সফর ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে, বিজেপির তীব্র সমালোচনা

নয়াদিল্লি, ২৩ জুলাই : সম্প্রতি সমাজবাদী পার্টির (এসপি) প্রধান অখিলেশ যাদব ও তাঁর স্ত্রী তথা মেনপুরি থেকে নির্বাচিত সাংসদ ডিম্পল যাদব সংসদের নিকটবর্তী একটি মসজিদে গিয়েছিলেন। এই সফর ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক বিতর্ক। সফরের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপির পক্ষ থেকে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসে।

সবচেয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি জামাল সিদ্দিকি। তিনি দাবি করেন, ওই মসজিদটি ধর্মীয় স্থান হলেও, সেখানে কার্যত একটি রাজনৈতিক বৈঠক হয়েছে এবং এসপি নেতারা মসজিদকে “অঘোষিত এসপি অফিসে” পরিণত করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ডিম্পল যাদবের পোশাক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, যা নিয়ে শুরু হয়েছে আরেক দফা বিতর্ক।

জামাল সিদ্দিকি সাংবাদিকদের বলেন,”অখিলেশ যাদব গতকাল সংসদের সামনে অবস্থিত মসজিদে গিয়েছিলেন। সেখানে এসপি সাংসদ ও ইমাম, ড. নাদভি ছিলেন। মসজিদের মধ্যে বসে রাজনৈতিক আলাপচারিতা হয়েছে। এটা শুধু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত নয়, সংবিধানবিরোধীও।”

তিনি ডিম্পল যাদবের ছবি নিয়ে বলেন,”ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ডিম্পল যাদব এমন ব্লাউজ পরেছেন যাতে তাঁর পিঠ ও পেট দেখা যাচ্ছে, এবং তাঁর মাথায় কোনও ওড়না ছিল না। এটা ইসলামিক সংস্কৃতির অবমাননা।”

সিদ্দিকি আরও জানান, বিজেপি এই ঘটনার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করবে এবং প্রতিবাদস্বরূপ ২৫ জুলাই ওই মসজিদেই একটি “জাতীয়তাবাদী অনুষ্ঠান” করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যেখানে জাতীয় সংগীত দিয়ে সূচনা ও সমাপ্তি হবে।

উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক এই ঘটনাকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,”ভারতের সংবিধান স্পষ্টভাবে বলে, ধর্মীয় স্থানকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা যায় না। সমাজবাদী পার্টি বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করছে।”

এসপি এই সমস্ত অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছে।

ডিম্পল যাদব স্পষ্ট বলেন,”মসজিদের ইমাম এবং আমাদের সাংসদ নাদভি সাহেব আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। কোনও বৈঠক হয়নি। বিজেপি শুধু মানুষের প্রকৃত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে, তাই এমন মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন,”বিহারে এসআইআর ইস্যু, পাহেলগাঁও হামলা, অপারেশন সিন্দুর — এত বড় বড় বিষয় নিয়ে সরকার কথা বলছে না, বরং মহিলাদের পোশাক নিয়ে রাজনীতি করছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”

অখিলেশ যাদব সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন,”আপনারাও বিজেপির ফাঁদে পড়েছেন। ধর্ম মানুষকে একত্রিত করে, আর বিজেপি চায় মানুষ আলাদা থাকুক।”

এসপি সাংসদ জিয়া উর রহমান বার্ক বলেন,”সংসদ ভবন বা এমপিদের বাসভবন কি কম পড়েছে? আমরা কেন মসজিদে বৈঠক করব? এটা বিজেপির ভিত্তিহীন প্রচার।”

তিনি ডিম্পল যাদবের পোশাক প্রসঙ্গে বলেন,”তিনি মাথা ঢেকেই ছিলেন। ছবি তোলার সময় ওড়না সরে যেতে পারে। এতে ইসলামিক সংস্কৃতির অবমাননা হয়নি।”

এসপি নেতা রাজীব রাই কটাক্ষ করে বলেন,”তবে কি এখন থেকে মন্দির বা মসজিদে প্রবেশের জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে লাইসেন্স নিতে হবে?”

কংগ্রেস সাংসদ ইমরান মাসুদ বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন,”ইমাম নাদভি একজন সাংসদ, তিনি তাঁর মসজিদে থাকতেই পারেন। ডিম্পল যাদব ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ীই পোশাক পরেছেন। বিজেপি এখন এতটাই মানসিকভাবে দেউলিয়া যে তারা একজন মহিলার পোশাক নিয়েও কটাক্ষ করছে। এটা লজ্জাজনক।”

এই ঘটনার মাধ্যমে ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্ম এবং নারীর পোশাক নিয়ে বিতর্ক ফের নতুন মাত্রা পেল। যেখানে সাধারণ মানুষ চায় রোজগার, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার মতো বাস্তব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হোক, সেখানে শাসক দল ও বিরোধীদের মধ্যে পোশাক ও ধর্ম নিয়ে বিতণ্ডা জনমনে নানা প্রশ্ন তুলছে।