ট্রাম্প ইসরায়েলি হামলা নিয়ে অবাক, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় পুনরায় হামলার হুঁশিয়ারি, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি

গাজা, ২২ জুলাই : মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘর্ষে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইসরায়েলি আক্রমণ এবং গাজার একটি ক্যাথলিক গির্জায় বোমাবর্ষণ নিয়ে চমকে উঠেছেন এবং এই ঘটনাগুলোর প্রতিকার করতে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করেন। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার (২২ জুলাই) এই তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘটনাগুলোর প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করার জন্য নেতানিয়াহুকে তাগিদ দিয়েছেন।

প্রেস সেক্রেটারি লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলি আক্রমণ এবং গাজায় ক্যাথলিক গির্জায় হামলা নিয়ে খুবই অবাক হয়েছিলেন।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই ধরনের আক্রমণের ঘটনায় তিনি তাড়াতাড়ি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন এবং দ্রুত সমাধানের জন্য নির্দেশ দেন।” ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন প্রশাসন প্রতিটি মানবিক সংকটের মধ্যে শান্তি স্থাপনে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, গাজায় নিহতদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ট্রাম্প এর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিতে চান।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলা বন্ধ না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে, গাজা ও সিরিয়ায় ইসরায়েলি আক্রমণ এবং বিমান হামলার ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, যা ট্রাম্পকে এই বিষয়ে তৎপর হওয়ার জন্য তাড়িত করেছে।

লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান এই দীর্ঘদিনের সংঘর্ষের অবসান ঘটুক। তিনি গাজার প্রতিটি জীবনকেই মূল্যবান মনে করেন এবং চান যেকোনো ধরনের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক।” এছাড়া, ট্রাম্প গাজার প্রতিটি হামলাবাদীকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে চান। গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনা এবং মানবিক সাহায্য প্রেরণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে বিশ্বের নানা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

লেভিট আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এটি তার একক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ।” ট্রাম্পের এই প্রচেষ্টার কারণে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো একটি সাফল্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত একটি নতুন দিকও সামনে এসেছে। গত জুন মাসে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল মিলে “মিডনাইট হ্যামার” নামে একটি সামরিক অভিযানে অংশ নেয়, যেখানে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সুবিধায় হামলা চালানো হয়। এই হামলায় বিশেষভাবে ফোর্ডো পারমাণবিক সুবিধা লক্ষ্যবস্তু হয়, যা ইরানের পরমাণু উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হামলার পর, ইসরায়েল এবং ইরান দুই পক্ষই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে, তবে এ পর্যন্ত সেই চুক্তি কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে পুনরায় সতর্ক করেছেন যে, যদি কোনো নতুন ধরনের আক্রমণ হয়, তবে তারা ফের হামলা চালাতে প্রস্তুত। ট্রাম্প তার “ট্রুথ সোশ্যাল” প্ল্যাটফর্মে বলেন, “ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, তাদের পারমাণবিক সুবিধাগুলি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং আমরা যদি প্রয়োজন মনে করি, তবে আমরা আবারও হামলা চালাতে প্রস্তুত।”

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি নিশ্চিত করেছেন যে, তাদের পারমাণবিক স্থাপনা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তিনি এই প্রশ্নে নির্দিষ্ট মন্তব্য করতে চাননি যে, হামলার পর কি কোনো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বেঁচে আছে। আরাঘচি বলেন, “এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে কখনওই আমরা পরমাণু সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপস করব না। এটি আমাদের জাতীয় গৌরবের বিষয়।”

ইরানের সরকার তাদের পারমাণবিক অধিকার বজায় রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে এবং তারা কোনোরকম আন্তর্জাতিক সমঝোতায় সম্মত হতে রাজি নয়, যা তাদের সমৃদ্ধির প্রক্রিয়া সীমিত করবে।

তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সাহায্য প্রেরণের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সাথে সমন্বয় করছেন। তাঁর এক সহযোগী কর্মকর্তা, টম ব্যারাক, যিনি বর্তমানে সিরিয়া সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, বলছেন, “এই পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে এটি আরও সংকটপূর্ণ হয়ে উঠছে।”

এছাড়া, ট্রাম্পের প্রশাসন গাজার মানবিক সহায়তার বিষয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চাচ্ছে। “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই প্রথম গাজার জন্য সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এবং তাকে এর জন্য প্রশংসা পাওয়া উচিত,” লেভিট মন্তব্য করেন।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘর্ষ, বিশেষত গাজা ও সিরিয়ায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কেও নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, এবং মার্কিন প্রশাসন যে কোনো পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এখন দেখার বিষয় হলো, ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের সমাধানে বিশ্বশক্তি গুলি কীভাবে কাজ করবে এবং এই অঞ্চলের শান্তি প্রক্রিয়া কোন দিকে এগোবে।