নয়াদিল্লি, ২১ জুলাই: আজ সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, যেখানে তিনি বর্ষাকালীন অধিবেশনকে “জাতির জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত” এবং “আমাদের সম্মিলিত সাফল্যের একটি সত্যিকারের উদযাপন” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই অধিবেশন বর্ষা ঋতুর মতোই নতুনত্ব এবং পুনর্নবীকরণের প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ভারতের সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির প্রতিফলন।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে উল্লেখ করেন “অপারেশন সিন্দুর”-এর কথা। তিনি বলেন, এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী ১০০ শতাংশ সাফল্যের সঙ্গে তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের মাস্টারমাইন্ডদের গোপন আস্তানা ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি জানান, এই অভিযানটি বিশ্বকে ভারতের সামরিক শক্তির সাক্ষী করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী আগ্রহ তৈরি করছে এবং দেশের সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে সংসদকে একযোগে এই বিজয় উদযাপন করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদ ও নকশালবাদের মতো হিংসাত্মক চ্যালেঞ্জের শিকার হয়েছে। তবে আজ নকশালবাদ ও মাওবাদের প্রভাব দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান অস্ত্র ও হিংসার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে এবং অতীতের ‘লাল করিডোর’গুলি এখন ‘প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সবুজ অঞ্চলে’ রূপান্তরিত হচ্ছে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে ভারত বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল এবং আজ তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তিনি জানান, গত দশ বছরে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার বাইরে এসেছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং ইউ.পি.আই-এর মতো উদ্যোগগুলি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করছে এবং ফিনটেক বিশ্বে ভারত একটি স্বীকৃত নাম হয়ে উঠেছে। ইউ.পি.আই-এর মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলনের ঐতিহাসিক মুহূর্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি ভারতের বিজয় উদযাপনের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) অনুযায়ী, ভারতে ৯০ কোটিরও বেশি মানুষ এখন সামাজিক সুরক্ষার আওতায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ভারতকে চোখের রোগ ট্রাকোমা মুক্ত ঘোষণা করেছে, যা জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
পহলগামে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনা সমগ্র বিশ্বকে হতবাক করেছিল এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি জানান, সেই সময় রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে ভারত থেকে প্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানের ভূমিকা প্রকাশ করতে আন্তর্জাতিক প্রচার শুরু করেন, যা সফল হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী সমস্ত সংসদ সদস্যকে ফলপ্রসূ ও উচ্চমানের বিতর্কের জন্য আহ্বান জানান এবং বলেন, দেশের উন্নয়ন, নাগরিকদের ক্ষমতায়ন এবং ভারতের অগ্রগতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই অধিবেশনে বেশ কয়েকটি বিল উত্থাপন করা হবে। তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দেশের সামরিক শক্তি ও জাতীয় সক্ষমতাকে সম্মান জানানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

