কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিআইএম এর স্তম্ভ ভি.এস. অচ্যুতানন্দন ১০১ বছর বয়সে প্রয়াত

তিরুবনন্তপুরম, ২১ জুলাই ২০২৫: কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এর প্রতিষ্ঠাতা প্রজন্মের শেষ জীবিত কমরেডদের একজন, ভি.এস. অচ্যুতানন্দন আজ ১০১ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। গত ২৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি তিরুবনন্তপুরমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং সিপিআই(এম) এর অন্যান্য শীর্ষ নেতারা সোমবার তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

১৯২৩ সালের ২০ অক্টোবর আলাপুঝা জেলার পুন্নাপরায় জন্মগ্রহণকারী ভেল্লিকাকাথ শঙ্করন অচ্যুতানন্দন কেরালার রাজনীতিতে এক বিশাল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে তাকে সেভাবে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

তিনি শ্রমিক অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টিতে ১৯৬৪ সালের বিভক্তির পর গঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে তিনি শেষ জীবিত ছিলেন। দারিদ্র্য ও পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণে তাকে মাত্র ১১ বছর বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে কাজ শুরু করতে হয়। ১৭ বছর বয়সে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। ১৯৪৬ সালের ঐতিহাসিক পুন্নাপরা-ভায়ালার গণঅভ্যুত্থানে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি পাঁচ বছরের বেশি সময় কারাগারে এবং চার বছরের বেশি সময় আত্মগোপনে ছিলেন।

অচ্যুতানন্দন সাতবারের বিধায়ক ছিলেন এবং তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দশটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র তিনটিতে হেরেছেন। ৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ১২ বছর তিনি সিপিআই(এম) এর রাজ্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যে সময়ে দলের শিকড় আরও গভীর হয় এবং শ্রমিক শ্রেণী ও প্রান্তিক মানুষের জন্য এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে।

২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ৮২ বছর বয়সে এই পদে আসীন হওয়া সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি ছিলেন। তার মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময় তিনি দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেন, স্বচ্ছতা বাড়াতে চেষ্টা করেন এবং সমাজের দরিদ্র অংশের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। মুন্নারে সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং আইটি খাতের উন্নয়নে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, তিনি রাজ্যের অবৈধ লটারি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং চলচ্চিত্রের পাইরেসি বন্ধে অবদান রেখেছিলেন।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ভি.এস. এর শাসনামলের সাফল্য স্পষ্ট ছিল, কারণ এলডিএফ রাজ্যের ১৪০টি আসনের মধ্যে ৬৮টি আসন পেয়েছিল, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে মাত্র দুটি কম ছিল। এরপর উমেন চান্ডির নেতৃত্বে বিরোধী ইউডিএফ সরকার গঠন করে।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ৯৩ বছর বয়সেও ভি.এস. অচ্যুতানন্দন এলডিএফের হয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন এবং মালাম্পুঝা আসন থেকে জয়লাভ করেন। তবে, দল তার স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে পিনারাই বিজয়নের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়। এরপর ২০১৬ সালের আগস্টে তাকে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।

ভি.এস. অচ্যুতানন্দন কেবলমাত্র একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি কেরালার কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক প্রতীক ছিলেন, যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছিলেন। তার মৃত্যু কেরালার রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করলো।