নয়াদিল্লি, ১৬ জুলাই:ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে দেশের পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের কেরল, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু জুড়েও আগামী এক সপ্তাহ জুড়ে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উত্তর, পূর্ব ও মধ্য ভারতের বিস্তৃত অংশে ইতিমধ্যে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে এবং আগামী কয়েকদিন ধরে এই পরিস্থিতি আরও তীব্র হবে বলে জানিয়েছে দপ্তর।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বর্তমানে দেশের ওপর দুটি সক্রিয় নিম্নচাপ অঞ্চল আবহাওয়ার এমন রূপের জন্য দায়ী। একটি নিম্নচাপ উত্তর-পশ্চিম রাজস্থান এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে, অন্যটি দক্ষিণ-পশ্চিম বিহার এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশে সক্রিয়। এই দুটি নিম্নচাপ অঞ্চল পরস্পরকে শক্তিশালী করে তুলছে এবং এর ফলে বড় অংশ জুড়ে বৃষ্টির প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এর প্রভাবে দেশের পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলে ১৬ ও ১৭ জুলাই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে।
এদিকে, কেরল, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জেলায় আগামী ১৬ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। উপকূলবর্তী ও ঘাট অঞ্চলে ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে। কেরলের থ্রিসুর, এরনাকুলাম ও ইডুক্কি, কর্ণাটকের উত্তর কানাড়া, উদুপ্পি, দক্ষিণ কানাড়া ও কাসারগোড় এবং রাজস্থানের বারান ও ঝালাওয়ারে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। একইসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের মীরপুর, রাজৌরি, রিয়াসি, রামবান, উধমপুর, জম্মু এবং সাম্বাতেও ১৬ জুলাই অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, পূর্ব মধ্যপ্রদেশ ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশে ইতিমধ্যে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বিহারের পাটনা, জামুই, ভোজপুর, ঝাড়খণ্ডের হজারিাবাগ, গিরিডি, কোডারমা, চতরা এবং পালামু সহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রদেশের সিংরাউলি, রেওয়া এবং সিদ্ধিতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উত্তর ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলির মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে ১৬ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দিনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। ১৬ ও ১৭ জুলাই বিহার ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ১৭ জুলাই। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডে ১৭, ২০ এবং ২১ জুলাই অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। হিমাচল প্রদেশেও ২১ ও ২২ জুলাই বৃষ্টি হতে পারে।
দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চলে গত কয়েকদিনে আকাশ মেঘলা ছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৬ জুলাই দিল্লিতে আকাশ মেঘলা থাকবে এবং হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ দেখা দিতে পারে। দিনের তাপমাত্রা ৩১ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ২ থেকে ৪ ডিগ্রি কম থাকবে। ১৭ জুলাই দিল্লিতে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে, হালকা বৃষ্টি এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ আবহাওয়া বজায় থাকবে। তাপমাত্রা প্রায় ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে। ১৮ জুলাই একই ধরনের আবহাওয়া থাকবে, তবে ১৯ জুলাই বৃষ্টি কমে যাবে এবং দিনের তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রিতে পৌঁছাবে।
এদিকে, পশ্চিম ভারতে কোকন ও গোয়া এবং ঘাট অঞ্চলে ২০ ও ২১ জুলাই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গোয়ায় ১৬ এবং ১৯ জুলাই প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও ত্রিপুরাতে ১৬ এবং ১৯ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ ভারতেও আগামী সাত দিন জুড়ে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কেরল, মাহে, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, রায়লসীমা, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, ইয়ানাম এবং তেলেঙ্গানায় ১৬ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত নিয়মিত বৃষ্টি হতে পারে। এই অঞ্চলে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিমি গতির ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দপ্তর।
আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কিছু অঞ্চলে হঠাৎ বন্যা, নদী উপচে পড়া, ভূমিধস, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা রয়েছে। জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং জরুরি অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রাকৃতিক পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজর রাখছে আবহাওয়া দপ্তর, এবং প্রতিদিন আবহাওয়ার আপডেট প্রদান করা হচ্ছে। জনগণকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে তারা সরকারি ও বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আবহাওয়া সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করুন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।

