বোকারো, ১৬ জুলাই : ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার ঘন বনাঞ্চল বিরহোড়েরা (গোমিয়া থানার অন্তর্গত) এলাকায় আজ ভোরে মাওবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির লড়াইয়ে দুই মাওবাদী নিহত হয়েছে। এই সংঘর্ষে সেন্ট্রাল রিজার্ভ প্যারামিলিটারি ফোর্সের (সিআরপিএফ) এলিট ইউনিট কোবরা-২০৯ ব্যাটালিয়নের এক জওয়ান শহিদ হয়েছেন। তিনি অসমের কোকরাঝারের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাওবাদীদের উপস্থিতি সম্পর্কে গোপন সূত্রে তথ্য পাওয়ার পর আজ ভোরে অভিযান চালানো হয়। সকাল প্রায় ৬টা নাগাদ নিরাপত্তা বাহিনী বনাঞ্চলে তল্লাশি চালানোর সময় হঠাৎ করে অতর্কিতে মাওবাদীদের ভারী গুলিবর্ষণের মুখে পড়ে।
প্রতিক্রিয়ায় জবাবি গুলিবর্ষণ চালিয়ে দুই মাওবাদীকে খতম করে বাহিনী। নিহতদের মধ্যে একজনের পরনে ছিল ইউনিফর্ম এবং অপরজন সাধারণ পোশাকে ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। নিহত মাওবাদীদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এই গুলির লড়াইয়ে সিআরপিএফ-র এক জওয়ান গুরুতর জখম হন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে, মাওবাদীদের খোঁজে অভিযান এখনও চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গা ঢাকা দিয়ে থাকা অন্যান্য মাওবাদীদের খোঁজে বনাঞ্চলে চিরুনি তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।
ঝাড়খণ্ড পুলিশ রাজ্য থেকে মাওবাদী প্রভাব নির্মূলের লক্ষ্যে চলতি বছর বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ঝাড়খণ্ডকে মাওবাদী-মুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলাই লক্ষ্য। চলতি বছরেই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৬ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০ জন আত্মসমর্পণ করেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল আরও বেশি। ২৪৪ জন গ্রেপ্তার, ৯ জন এনকাউন্টারে নিহত এবং ২৪ জন আত্মসমর্পণ করেছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন চারজন জোনাল কমান্ডার, একজন সাব-জেনারেল কমান্ডার এবং তিনজন এরিয়া কমান্ডার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পূর্বেই জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই গোটা দেশকে মাওবাদী সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, টানা অভিযানের ফলে মাওবাদী গোষ্ঠীগুলির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ পড়ছে এবং আত্মসমর্পণের সংখ্যা তা প্রমাণ করছে।
ঝাড়খণ্ডে নকশাল বিরোধী অভিযানে শহিদ অসমের কোকরাঝারের বাসিন্দা জওয়ান সি.টি./জিডি পর্নেশ্বর কোচ–এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। শহিদ জওয়ানকে “অসমের বীরসন্তান” ও “মা ভারতীর বীর যোদ্ধা” বলে অভিহিত করেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা লেখেছেন, অসমের বীরসন্তান ও মা ভারতীর বীর যোদ্ধা কোকরাঝারের পর্নেশ্বর কোচ আজ ভোরে ঝাড়খণ্ডে নকশালদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শহিদ হয়েছেন। অসমবাসী তাঁর এই আত্মত্যাগকে কুর্নিশ জানায় ও তাঁর পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছে। আমরা সবসময় তাঁদের পাশে থাকব। এই বলিদান কখনও বৃথা যাবে না, কারণ আমাদের বাহিনী সর্বশক্তি প্রয়োগ করে পৃথিবী থেকে নকশালবাদের মূলোৎপাটন করবে।
সাথে তিনি লেখেন, অসম সরকার ইতিমধ্যেই শহিদ জওয়ানের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে, পর্নেশ্বর কোচের মৃত্যুতে অসম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজ্যজুড়ে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন চলছে।

