১৫ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার — ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইল। ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে ১৮ দিনের গবেষণামূলক সফর শেষে। অ্যাক্সিওম স্পেস-এর নেতৃত্বে পরিচালিত অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের অংশ হিসেবে তিনি মহাকাশে যান ২৫ জুন এবং মহাকাশে অবস্থানকালে তিনি ও তাঁর দল ৬০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও গবেষণায় অংশ নেন।
এই ঐতিহাসিক অভিযানে ক্যাপ্টেন শুক্লা ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সফর করেন। এর মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে যাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন; প্রথম ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা, যিনি ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথ অভিযানে অংশ নেন। তবে শুভাংশু শুক্লা হচ্ছেন প্রথম ভারতীয়, যিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে আইএসএস-এ পৌঁছান এবং সম্পূর্ণভাবে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি মিশনে অংশ নেন।
স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযান ‘গ্রেস’ সোমবার, ১৪ জুলাই বিকেল ৪:৫০ মিনিটে আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং পৃথিবীতে ফিরে আসে মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই দুপুর ৩:০১ মিনিটে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরে সফলভাবে অবতরণ করে। অবতরণের পরপরই উদ্ধারকারী দল মহাকাশচারীদের উদ্ধার করে এবং তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। শুভাংশু শুক্লাকে হাসিমুখে মহাকাশযান থেকে বের হতে দেখা যায়; তবে দীর্ঘদিন মহাশূন্যে থাকার কারণে মাধ্যাকর্ষণে পুনরায় অভ্যস্ত হতে তাঁকে সহায়তা নিতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স -এ শুভাংশু শুক্লার এই সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমি জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লাকে স্বাগত জানাই তার ঐতিহাসিক মহাকাশ মিশন শেষে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পরিদর্শনকারী ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে তিনি এক বিলিয়ন স্বপ্নকে অনুপ্রাণিত করেছেন তাঁর সাহস, নিষ্ঠা ও অগ্রণী মানসিকতার মাধ্যমে।” তিনি আরও বলেন, “এটি আমাদের নিজস্ব মানব মহাকাশ মিশন ‘গগনযান’-এর দিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
অ্যাক্স-৪ মিশনে শুভাংশু শুক্লা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মহাকাশচারী পেগি হুইটসন (মিশন কমান্ডার), পোল্যান্ডের স্লাভোস উজনানস্কি-উইসনিয়েভস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবার কাপু অংশ নেন। এই মিশনের মাধ্যমে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির পক্ষেও এটি ছিল চার দশক পর প্রথম মানব মহাকাশ ভ্রমণ। এই মিশনে তাঁরা কৃষি, চিকিৎসা, মানব শারীরবিদ্যা ও পানি পরিশোধন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করেন, যার নমুনা এখন পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে বিশ্লেষণের জন্য গবেষণাগারে পাঠানো হবে।
এই সফল অভিযান ভারতের গগনযান প্রকল্পের প্রস্তুতিকে আরও জোরদার করল। ইসরো আগামী বছর নিজস্ব রকেট ও মহাকাশযান ব্যবহার করে ভারতীয় নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। শুভাংশু শুক্লার এই অভিযান সেই প্রস্তুতিরই একটি কৌশলগত ও মনস্তাত্ত্বিক মাইলফলক, যা ভবিষ্যতের ভারতীয় মহাকাশযাত্রার পথে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।
এই সাফল্যের মাধ্যমে ভারত শুধু বৈজ্ঞানিকভাবে নয়, কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই মুহূর্তটি কোটি কোটি ভারতীয়র জন্য অনুপ্রেরণার এবং ভবিষ্যতের মহাকাশবিজ্ঞানীদের জন্য এক বাস্তব উদাহরণ — যে ভারতীয়রাও এখন মহাকাশ গবেষণার প্রথম সারিতে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করছে।

