নয়াদিল্লি, ১৪ জুলাই — কার্টুনিস্ট হেমন্ত মালবিয়ার গ্রেফতার রোধের আবেদন সোমবার সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে গেল। বিচারপতিরা স্পষ্ট ভাষায় মন্তব্য করেছেন, “বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার করা হচ্ছে” এবং এমন ‘অসাংবিধানিক’ মন্তব্য বা চিত্র প্রকাশকে অন্ধভাবে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে আগামী শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১৫ জুলাই।
হেমন্ত মালবিয়া একটি কার্টুন প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-কে ব্যঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই কার্টুনকে কেন্দ্র করেই তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের হয়। এরই প্রেক্ষিতে তিনি জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তবে আদালত তাঁকে একদিনেরও জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা দিতে অস্বীকার করে।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ শুনানির সময় মৌখিকভাবে মন্তব্য করে, “এই ধরনের কার্টুনিস্ট ও স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানরা বাকস্বাধীনতার নামে সীমা লঙ্ঘন করছেন। এটি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।” আদালতের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, তারা মনে করে সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার থাকা সত্ত্বেও, সেই অধিকারের অপব্যবহার করলে তাকে অন্ধভাবে রক্ষা করা যাবে না।
এর আগে ৩ জুলাই মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টও হেমন্ত মালবিয়ার আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। সেখানেও বিচারপতিরা বলেন, তিনি “বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার করেছেন” এবং “কার্টুন প্রকাশে কোনরূপ সংযম বা বিবেচনা দেখাননি”। এরপর মালবিয়া সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান, কিন্তু এখানেও প্রাথমিকভাবে তাঁকে স্বস্তি দেওয়া হলো না।
নিজের আবেদনপত্রে হেমন্ত মালবিয়া উল্লেখ করেছেন যে, বিতর্কিত কার্টুনটি ২০২0 সালের কোভিড-১৯ মহামারীর সময় প্রকাশিত হয়। তিনি দাবি করেন, এই কার্টুনটি মূলত স্যাটায়ারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক মন্তব্য। তাঁর যুক্তি অনুযায়ী, করোনা টিকাকরণ নিয়ে ভুল তথ্য, দ্বিধা ও সরকারি নেতাদের বেপরোয়া মন্তব্য—যেমন “এই টিকা নিরাপদ পানির মতো”—তাকে এই চিত্র অঙ্কনের জন্য প্রেরণা দেয়।
কার্টুনে একটি কাল্পনিক দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যেখানে একজন নাগরিককে একটি টিকা দেওয়া হচ্ছে, আর সেটি একটি রাজনৈতিক নেতার দ্বারা। মালবিয়ার মতে, এটি সামাজিক ব্যঙ্গচিত্রের একটি অংশ, যেখানে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
মালবিয়া এ-ও দাবি করেছেন যে, এই কার্টুনটি গত চার বছর ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে, কিন্তু সম্প্রতি সেটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাঁর মতে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শিল্পীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকার অধিকার রোধ করার একটি প্রচেষ্টা।
সুপ্রিম কোর্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে ১৫ জুলাই। তখন হেমন্ত মালবিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর জামিনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে শিল্পী মহল এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষাকারী বহু সংস্থা এই মামলার দিকে নজর রাখছে, কারণ এর রায় ভবিষ্যতে শিল্পী ও ব্যঙ্গচিত্রকারদের স্বাধীনতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

