যমুনা নদী থেকে উদ্ধার নিখোঁজ স্নেহার মৃতদেহ, শোক প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ১৩ জুলাই: অবশেষে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছর বয়সী ছাত্রী স্নেহা দেবনাথ নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর আজ তার মরদেহ পাওয়া গেল যমুনা নদীতে, গীতা কলোনি ফ্লাইওভারের নিচে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় স্নেহার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত এবং দিল্লির ত্রিপুরা ভবনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, স্নেহার নিখোঁজ এর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দুই রাজ্যেই তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল। অবশেষে তার মৃতদেহ উদ্ধারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সর্বত্র।

স্নেহা মূলত ত্রিপুরার সাব্রুম এলাকার বাসিন্দা ছিল, দিল্লির আত্মা রাম সনাতন ধর্ম কলেজে পড়াশোনা করতো সে। উচ্চশিক্ষার জন্যই দিল্লিতে গিয়েছিল সে। তার হোস্টেল রুম থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। সেটি তার নিজের হাতেই লেখা বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
নোটে লেখা ছিল, “আমি সিগনেচার ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ দিতে যাচ্ছি। আমি নিজেকে ব্যর্থ ও বোঝা মনে করছি। এভাবে বাঁচা আর সম্ভব হচ্ছে না। এখানে কোনও ষড়যন্ত্র নেই, এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত।” তার হাতে লেখা এই চিঠিটি বর্তমানে পুলিশের হাতে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ৭ জুলাই সকালে স্নেহা তাঁর মাকে জানায়, সে তার এক বন্ধুকে সারাই রোহিলা রেলওয়ে স্টেশনে সকাল ৬:৪৫-এর ট্রেন ধরাতে যাচ্ছে। সকাল ৫:৫৬ মিনিটে তারা শেষবারের মতো কথা বলেন। সকাল ৮:৪৫-এ পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, স্নেহার সেই বন্ধুর সাথে সকালে তার দেখাই হয়নি। বরং স্নেহা একটি ক্যাব নিয়ে সোজা যায় সিগনেচার ব্রিজে — যা একটি পরিচিত আত্মহত্যার স্থান। যেখানে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছিল না। ক্যাব চালক নিশ্চিত করেছেন যে তিনি তাকে ব্রিজের কাছে নামিয়ে দিয়েছেন। এদিকে, স্নেহার মোবাইলের শেষ লোকেশনও ছিল ওই এলাকাতেই।

স্নেহার পরিবার সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন আবেদন জানিয়ে জনসাধারণের সহানুভূতি ও সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। এই ঘটনা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। তিনি রাজ্য পুলিশকে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার নির্দেশ দেন। ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় গোটা ঘটনার উপর নজর রাখছিলেন।

ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) ও দিল্লি পুলিশ মিলে নিগম বোধ ঘাট থেকে শুরু করে নয়ডা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত তল্লাশি চালায়। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন, সেদিন সকালে একটি মেয়ে ব্রিজের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তবে সুনিশ্চিতভাবে স্নেহা বলে কেউ চিনতে পারেননি। অবশেষে গীতা কলোনি ফ্লাইওভারের নিচে যমুনা নদীতে এক অজ্ঞাত মরদেহ পাওয়া যায়, যাকে পরে স্নেহা দেবনাথ হিসেবেই শনাক্ত করা হয়।

স্নেহার গুরুতর অসুস্থ বাবা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সুবেদার মেজর যিনি ডায়ালিসিসে রয়েছেন। তিনি জানান, মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। যা নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তারা সিগনেচার ব্রিজে অকার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, যদি ক্যামেরাগুলো কাজ করত, তাহলে অন্তত তারা জানতে পারতেন যে স্নেহার সাথে কি ঘটেছিল। নেহার মৃত্যুর ঘটনাটি এখনো তদন্তসাপেক্ষ। তার সঙ্গে কি ঘটেছিল, কেন তার এ ধরনের পদক্ষেপ সে সম্পর্কে স্পষ্ট তো কিছুই বুঝতে পারছেন না স্নেহার মা বাবা। ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে স্নেহার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুটি রাজ্যেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে।।