শিলং, ১৩ জুলাই:মেঘালয়ের বিখ্যাত জীবন্ত মূল সেতুগুলিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা দেওয়ার প্রচেষ্টাকে জোরালো সমর্থন জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার সিয়েজ গ্রামে জীবন্ত মূল সেতু পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি দেখানোর জন্য নয়, বরং বিশ্বকে বোঝানোর জন্য যে আপনারাই প্রথমে তা করেছেন।”
তিনি বলেন, “স্থানীয় জ্ঞানে ভিত্তি করে টেকসই পদ্ধতির এই উদাহরণ বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণা হতে পারে।”
জীবন্ত মূল সেতুগুলি মেঘালয়ের খাসি ও জৈন্তিয়া জনগোষ্ঠীর বহু প্রজন্ম ধরে সৃষ্ট এক অনন্য জীবন্ত স্থাপত্য নিদর্শন। গাছের শিকড় দিয়ে গড়া এই প্রাকৃতিক, বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার্ড সেতুগুলি প্রাকৃতিক ও মানব সৃজনশীলতার বিরল সংমিশ্রণ তুলে ধরে।
২০১৮ সালে মেঘালয় সরকার এই সেতুগুলিকে “সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ” ক্যাটাগরিতে ইউনেস্কো হেরিটেজ তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। যদিও প্রস্তাবটি নানান প্রক্রিয়াগত বাধা ও স্থানীয় সম্পৃক্ততার ঘাটতির কারণে এখনও চূড়ান্ত হয়নি, সম্প্রতি কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় নতুন উদ্যমে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সীতারমন স্থানীয় প্রবীণ, পঞ্চায়েত নেতা এবং ইকোসিস্টেম পরিষেবা পেমেন্ট প্রকল্পের উপভোক্তাদের সঙ্গেও আলাপ করেন। বিশ্বব্যাংক, কেএফডব্লিউ ও এডিবি-র সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিবেশ রক্ষার জন্য সরাসরি আর্থিক সুবিধা পান।
সোহবার গ্রামে সফর করে নির্মলা সীতারমন বলেন, “সীমান্ত গ্রাম মানেই ভারতের শেষ নয়, বরং এটাই ভারতের শুরু।” তিনি জানান, ‘ভাইব্রেন্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ে মেঘালয়ের যে ৯২টি গ্রাম নির্বাচিত হয়েছে, সোহবার তাদের অন্যতম।
অর্থমন্ত্রী এই অঞ্চলে উন্নয়নের মূল ক্ষেত্র হিসেবে সড়ক পরিকাঠামো, ডিজিটাল সংযোগ, টেলিভিশন কভারেজ, বিদ্যুৎ এবং আর্থিক পরিষেবার প্রসারের কথা বলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, “প্রতিটি গ্রামের ৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে ব্যাঙ্ক, এটিএম বা অন্য আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে যাবে।”
রবিবার সীতারমন সফরের শেষ দিনে ছোড়ার রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম স্কুল পরিদর্শন করবেন। এই প্রতিষ্ঠান কয়েক দশক ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও গ্রামীণ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
তিনি বলেন, “খাসি পাহাড়ের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে রামকৃষ্ণ মিশন আত্মনির্ভরতা, মূল্যভিত্তিক শিক্ষা ও সমাজসেবার মাধ্যমে নতুন দিশা দেখিয়েছে।”
এই সফরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও সীমান্ত উন্নয়নের সঙ্গতিপূর্ণ সমন্বয়ই হবে পরবর্তী সময়ে পূর্ব ভারতের টেকসই অগ্রগতির চালিকাশক্তি।

