গুরগাঁও, ১২ জুলাই :প্রাক্তন রাজ্যস্তরের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবকে তাঁর বাবা দীপক যাদব গুলি করে হত্যা করেছেন বলে শনিবার গুরগাঁও পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ১০ জুলাই, গুরগাঁও সেক্টর ৫৭-এ তাঁদের নিজস্ব বাসভবনে।
২৫ বছর বয়সী রাধিকা, যিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন, নিজের কোনো টেনিস একাডেমি চালাতেন না। বরং তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ার ভিত্তিতে টেনিস কোর্ট বুক করে উঠতি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই বিষয়টি তাঁর বাবা দীপক যাদবের একেবারেই অপছন্দ ছিল এবং বহুবার তিনি রাধিকাকে এ কাজ বন্ধ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু রাধিকা তা মানেননি। এই নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছিল।
গুরগাঁও পুলিশের এক তদন্তকারী কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, “রাধিকার নিজের কোনো একাডেমি ছিল না। তিনি বিভিন্ন কোর্টে বুকিং করে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতেন। তাঁর বাবা চাইতেন তিনি এ কাজ বন্ধ করুন, কিন্তু রাধিকা রাজি হননি। এটিই ছিল তাঁদের মধ্যে মূল দ্বন্দ্ব।”
প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, রাধিকার চালানো একাডেমির আয় নিয়ে দীপক যাদব অস্বস্তিতে ছিলেন, কারণ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাঁকে মেয়ে-নির্ভর বলে ব্যঙ্গ শুনতে হত। তবে পরবর্তী তদন্তে জানা যায়, দীপক যাদব একাধিক সম্পত্তি থেকে ভাড়ার মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন করতেন এবং তাঁর প্রায় বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি ছিল একটি ব্রোকারেজ ব্যবসা থেকেও। অর্থাৎ তিনি রাধিকার উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল ছিলেন না, বরং মানসিকভাবে দীর্ঘদিন ধরেই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।
কিছু প্রতিবেদন দাবি করেছিল, দীপক যাদব তাঁর মেয়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা এবং ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার আগ্রহ নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এমনকি রাধিকার একটি সংগীত ভিডিওতে অংশগ্রহণ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে দাবি করা হয়। তবে সেক্টর ৫৬ থানার ইনস্পেক্টর বিনোদ কুমার এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ওই ভিডিওটি ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তার সাথে হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। অভিযুক্ত শুধুমাত্র এতটাই বলেছেন যে তিনি চাননি মেয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপার্জন করুক।”
রাধিকার ছোটবেলা থেকেই টেনিস খেলায় দক্ষতা দেখিয়ে আসছিলেন এবং তাঁর পিতা দীপক যাদব তাঁর প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি খরচ করেন। তবে দুই বছর আগে একটি গুরুতর চোটের কারণে তিনি প্রতিযোগিতামূলক টেনিস থেকে কিছুটা দূরে সরে যান এবং এরপর থেকেই তিনি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।
১০ জুলাই, ঘটনার দিন, দীপক যাদব তাঁর লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিভলভার দিয়ে রাধিকাকে গুলি করেন। পুলিশ জানিয়েছে, চারটি গুলি চালানো হয় – তিনটি তাঁর পিঠে ও একটি কাঁধে লাগে, যার ফলে ঘটনাস্থলেই রাধিকার মৃত্যু হয়।
শনিবার গুরগাঁওয়ের এক আদালত দীপক যাদবকে ১৪ দিনের বিচারিক হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। তাঁকে ভোন্ডসি জেলে রাখা হয়েছে। পুলিশ তাঁকে আদালতে পেশ করলেও কোনো রকম রিমান্ড চায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, দীপক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গত ১৫ দিন ধরে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, ঘুমোতে পারছিলেন না এবং কারোর সঙ্গে কথাও বলতেন না। তিনি বাড়িতে আনমনা হয়ে ঘোরাঘুরি করতেন ও প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং নারীদের স্বাধীন পেশাজীবন নিয়ে সচেতনতা তৈরির গুরুত্ব নতুন করে সামনে এনে দিয়েছে। গুরগাঁও পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করা হবে।

