নয়াদিল্লি, ১২ জুলাই : প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অংশে অনুষ্ঠিত ১৬তম রোজগার মেলায় অংশগ্রহণ করে ৫১ হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতীকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় নিয়োগপত্র বিতরণ করেন।
নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুবকেরা আজ থেকে সরকারি পরিষেবার নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। তিনি তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আপনারা বিভিন্ন বিভাগে নিযুক্ত হলেও, সবার লক্ষ্য এক—জনসেবার মাধ্যমে দেশসেবা, যা ‘নাগরিক প্রথম’ নীতিতে পরিচালিত।”
প্রধানমন্ত্রী ভারতের দুটি অসীম শক্তির কথা তুলে ধরেন—ডেমোগ্রাফি (জনসংখ্যার গঠন) ও ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র)। তিনি বলেন, “বিশ্ব আজ স্বীকার করে নিয়েছে, ভারতের যুবসম্পদ ও গণতন্ত্র এক অনন্য শক্তি। ভারত এই দুই শক্তির উপর ভিত্তি করেই আজ বিশ্বমঞ্চে নিজেকে শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠা করছে।”
সম্প্রতি পাঁচটি দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি দেখেছি, বিশ্বজুড়ে ভারতের যুবশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে। আমার এই সফরে সই হওয়া চুক্তিগুলি—প্রতিরক্ষা, ফার্মাসিউটিক্যাল, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শক্তি ও রেয়ার আর্থ খনিজ খাতে—দেশের যুবসমাজকে উপকৃত করবে, কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।”
তিনি বলেন, আজকের কর্মসংস্থানের ধরণ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই যুগে উদ্ভাবন, স্টার্টআপ ও গবেষণা-ভিত্তিক অর্থনীতিই এগিয়ে দিচ্ছে দেশকে। প্রধানমন্ত্রী যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি গর্বিত এবং আশাবাদী—আজকের প্রজন্ম উচ্চাকাঙ্ক্ষী, উদ্ভাবনী এবং নতুন কিছু গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষায় উদ্বুদ্ধ।”
তিনি বলেন, সরকার শুধু সরকারি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করছে না, বরং বেসরকারি খাতেও নতুন কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার সম্প্রতি অনুমোদন করেছে এমপ্লয়মেন্ট লিঙ্কড ইনসেনটিভ স্কিম। এই প্রকল্পের অধীনে প্রথম বেসরকারি চাকরি পাওয়া যুবকদের ১৫,০০০ প্রদান করবে সরকার। এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা এবং লক্ষ্যমাত্রা ৩.৫ কোটি নতুন চাকরি সৃষ্টি।
উৎপাদন খাত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ ভারতের অন্যতম বৃহৎ শক্তি আমাদের মেনুফ্যাকচারিং সেক্টর। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষেত্র শক্তিশালী হয়েছে। পিএলআই স্কিমের মাধ্যমে ১১ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন মূল্য ₹১১ লক্ষ কোটি ছাড়িয়েছে, যা গত ১১ বছরে পাঁচগুণ বেড়েছে। আগে ২-৪টি ইউনিট ছিল, এখন ৩০০-র বেশি মোবাইল নির্মাণ ইউনিট চলছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে ভারতের সাফল্য এখন নজরকাড়া—উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১.২৫ লক্ষ কোটি। ভারত আজ বিশ্বের বৃহত্তম লোকোমোটিভ প্রস্তুতকারক। অটোমোবাইল খাতে গত পাঁচ বছরে ৪০ বিলিয়নেরও বেশি এফডিআই এসেছে। নতুন নতুন কারখানা, রেকর্ড হারে গাড়ি বিক্রি ও বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-এর এক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলেন, গত এক দশকে ৯০ কোটিরও বেশি ভারতীয় নাগরিক বিভিন্ন সরকারি কল্যাণ প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। শুধু ভাতা নয়, এই প্রকল্পগুলি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
পিএম আওয়াস যোজনা-র মাধ্যমে ৪ কোটি বাড়ি তৈরি হয়েছে, আরও ৩ কোটির নির্মাণ চলছে। স্বচ্ছ ভারত অভিযান-এ ১২ কোটির বেশি শৌচালয় নির্মাণের ফলে প্লাম্বার ও নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। উজ্জ্বলা যোজনা-র মাধ্যমে ১০ কোটির বেশি এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যা বটলিং প্ল্যান্ট ও ডেলিভারি নেটওয়ার্কে হাজার হাজার চাকরি তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনা-এর আওতায় এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকিতে ছাদে সৌরপ্যানেল বসানো হচ্ছে, যা ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান ও নির্মাতাদের জন্য চাকরি তৈরি করছে। নামো ড্রোন দিদি প্রকল্পে গ্রামীণ মহিলাদের ড্রোন চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, লক্ষপতি দিদি মিশনে ইতিমধ্যেই ১.৫ কোটির বেশি মহিলা লক্ষপতি হয়েছেন। ব্যাংক সাক্ষী, বীমা সাক্ষী, কৃষি সাক্ষী, পশু সাক্ষী-র মতো উদ্যোগের ফলে নারীরা টেকসই কর্মসংস্থানের পথ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি স্কিমের মাধ্যমে হকার ও স্ট্রিট ভেন্ডাররা মূলধারার অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা স্কিম ঐতিহ্যবাহী কারিগরদের প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও ঋণের মাধ্যমে সশক্ত করছে।
তিনি বলেন, “গত ১০ বছরে ২৫ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন—এটি কর্মসংস্থানের সুযোগ ছাড়া সম্ভব হতো না। আজ বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থাও ভারতকে সবচেয়ে সমতাভিত্তিক দেশগুলির মধ্যে স্থান দিচ্ছে।”
শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সময়টা ভারতের উন্নয়ন মহাযজ্ঞ। এই উন্নয়নযজ্ঞের নেতৃত্ব দেবে আমাদের যুবসমাজ। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের আমি শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা নতুন শক্তি নিয়ে নাগরিকদের সেবা করুন—‘নাগরিক দেবো ভবঃ’—এই ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে রোজগার মেলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪৭টি স্থানে আজকের রোজগার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১০ লক্ষেরও বেশি নিয়োগপত্র বিতরণ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা রেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডাক বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, আর্থিক পরিষেবা, শ্রম ও কর্মসংস্থান সহ একাধিক দপ্তরে যোগ দেবেন। এটি দেশের যুব সমাজকে ক্ষমতায়নের পাশাপাশি জাতি গঠনে অংশগ্রহণের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

