আগরতলা, ১১ জুলাই: নতুন করে স্মার্ট মিটার লাগানোর বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে রাজ্যজুড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে আসছিল। বিদ্যুৎ বিলে ফিউল চার্জ এবং স্যানড্রি চার্জ যোগ করার বিষয়ও প্রশ্ন উঠেছিল গ্রাহকদের তরফ থেকে। এবার সকল বিষয়ে স্পষ্টিকরণ দিলেন বিদ্যুৎ নিগমের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু। এদিন স্মার্ট মিটার কেন লাগানো হবে এবং এটি লাগালে কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিদ্যুৎ নিগমের আধিকারিকগণ।
যে বিষয়ে ফিউল চার্জ এবং স্যানড্রি চার্জ যোগ হচ্ছে, সেই সম্পর্ককে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক জানিয়েছেন, মূলত জ্বালানের খরচ এবং ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই এই অতিরিক্ত মূল্য ৩ মাস অন্তর অন্তর গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হবে। কেননা বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎ নিগমের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু বলেন স্মার্ট মিটার ব্যবহার করলে গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ নিগম উভয়েই উপকৃত হবেন। গ্রাহকরা খুব তাড়াতাড়ি যে কোন বিদ্যুৎজনিত সমস্যায় সাহায্য পাবেন। কেননা স্মার্ট মিটার লাগানো হলে বিদ্যুৎ লাইনে কোন সমস্যা দেখা দিলে সেই খবর সরাসরি পৌঁছে যাবে নিগমের কাছে। গ্রাহকদের যোগাযোগ করার আগেই নিগমের কর্মীরা পৌঁছে যাবেন সমস্যা সমাধানে। ফলে উপকৃত হবেন গ্রাহক।
তিনি আরো বলেন, টিএসইসিএল বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের জন্য ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ স্মার্টমিটার স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েছে। এর ফলে নির্ভুল বিদ্যুৎ বিল এবং রাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। মোট আনুমানিক ৬ লাখ স্মার্ট মিটারের মধ্যে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৮৮,৭৪৮টি স্মার্ট মিটার ইতিমধ্যেই বসানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পুনর্গঠিত বিতরণ ক্ষেত্র প্রকল্প (আরডিডিএস ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিকাঠামো আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে টিএসইসিএল স্মার্ট মিটার স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। ৬০৩ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে এই স্মার্ট মিটার বসানোর জন্য।
তিনি বলেন, স্মার্ট মিটার এমন প্রযুক্তি-সক্ষম যন্ত্র, যা স্বয়ংক্রিয় ও দূরবর্তীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য পাঠাতে সক্ষম। এটি গ্রাহক এবং টিএসইসিএল উভয়ের কাছেই রিয়েল-টাইম ব্যবহার তথ্য থাকবে, ফলে ম্যানুয়াল মিটার রিডিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না। স্মার্ট মিটার পোস্টপেইড ও প্রিপেইড উভয় ধরণের বিলিং সমর্থন করে, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার নিরীক্ষণ, এবং দ্রুত ত্রুটি শনাক্তকরণের সুবিধা দেয়ও প্রদান করে।
তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যেই মন্ত্রী, বিধায়ক ও উচ্চপদস্থ আমলাদের সরকারি কোয়ার্টার ও বাসভবনে স্মার্ট মিটার বসানো শুরু হয়েছে। মোট লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬ লাখের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮৮,৭৪৮টি মিটার বসানো হয়েছে। এই প্রকল্পটি প্রায় ৬০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, এই উদ্যোগটি শীর্ষ স্তর থেকে স্মার্ট গ্রিড রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। এর আরো একটি বড় সুবিধা হলো রিয়েল-টাইম এনার্জি মনিটরিং, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং সেই ডেটা কন্ট্রোল রুমে বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য পাঠানো হয়।
এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বকেয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কিত বাংলাদেশের যত বকেয়া টাকা ছিল সবগুলি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধুমাত্র লেট পেমেন্ট ফি বাবদ ১২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বাংলাদেশের।

