“নারী যখন তোলে, দেশ তখন উঠে দাঁড়ায়” — মীরাবাই চানুর সঙ্গে মোদিনগরের ওজন উত্তোলন অ্যাকাডেমি সফরে বললেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী রাখ্শা খাড়সে

মোদিনগর, ৯ জুলাই : “নারী যখন তোলে, দেশ তখন উঠে দাঁড়ায়”—এই বার্তাকে সামনে রেখে আজ মোদিনগরের ‘ওয়েটলিফটিং ওয়ারিয়ার্স অ্যাকাডেমি’-তে এক বিশেষ সফরে এলেন কেন্দ্রীয় যুব কার্য ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্রিমতি রাখ্শা খাড়সে। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অলিম্পিক পদকজয়ী মীরাবাই চানু, ভারতীয় ওজন উত্তোলন দলের প্রধান কোচ বিজয় শর্মা, ইন্ডিয়ান ওয়েটলিফটিং ফেডারেশনের সভাপতি সহদেব যাদব এবং সিইও অশ্বিনী কুমার।

এই সফর ছিল শুধু একটি অ্যাকাডেমি পরিদর্শন নয়, বরং ‘খেলো ভারত নীতি ২০২৫’–এর অন্তর্গত ক্রীড়া উন্নয়নের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার এক দৃপ্ত পদক্ষেপ। আলোচনায় উঠে আসে ক্রীড়াবিদদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য শক্তি ও কন্ডিশনিং, পুষ্টি এবং ক্রীড়া বিজ্ঞান চর্চার অপরিহার্যতা।

‘ওয়েটলিফটিং ওয়ারিয়ার্স অ্যাকাডেমি’, যা প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতীয় প্রধান কোচ বিজয় শর্মা, আজ ভারতের অন্যতম সেরা ওজন উত্তোলন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায় এটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং এই কেন্দ্রটি এখন প্রতিভা গড়ার এক নিখুঁত কারখানা।

এই আধুনিক অ্যাকাডেমিতে রয়েছে সম্পূর্ণ সুসজ্জিত জিম, সুনির্দিষ্ট পুষ্টি বজায় রাখতে একটি নিজস্ব খাবার ব্যবস্থা, এবং আধুনিক ক্রীড়া বিজ্ঞান ও পুনর্বাসন সুবিধা। এখানকার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি কেবলমাত্র প্রচলিত কোচিং-এ সীমাবদ্ধ নয়; বরং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, ইনজুরি প্রতিরোধ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত হয়েছে। আবাসিক অংশে রয়েছে ৩০টি কক্ষ, যেখানে একসঙ্গে ৬০ জন ক্রীড়াবিদ থাকতে পারেন। বর্তমানে এখানে ৮-১৪ বছর বয়সী ৪০ জন নবীন ক্রীড়াবিদ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং তাঁদের সঙ্গে আছেন ১৫ জন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্বয়ং অলিম্পিক পদকজয়ী মীরাবাই চানু।

অ্যাকাডেমির তরুণ ক্রীড়াবিদ ও কোচদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্রিমতি খাড়সে বলেন, “খেলো ভারত নীতি ২০২৫-এর আওতায় আমরা এমন একটি পরিকাঠামো গড়ে তুলছি, যা কেবল প্রতিভা আবিষ্কারই করবে না, বরং তাদের ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেবে। আমি উপলব্ধি করেছি—যখন নারী তোলে, তখন পুরো জাতি উঠে দাঁড়ায়। আমরা অঙ্গীকার করছি, কোনো প্রতিভা যাতে হারিয়ে না যায়, কোনো স্বপ্ন যাতে অপূর্ণ না থাকে।”

এই অনুষ্ঠানে মীরাবাই চানুর উপস্থিতি তরুণ ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নতুন প্রেরণার সঞ্চার করেছে। তিনি নিজেই এই অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত অনুশীলন করেন, এবং তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাফল্য বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। প্রতিমন্ত্রী খাড়সে তাঁর উপস্থিতির প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এই অ্যাকাডেমিতে মীরাবাই চানুর মতো চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে নবীন খেলোয়াড়দের ঘনিষ্ঠভাবে অনুশীলনের সুযোগ তাদের মানসিক ও শারীরিক গঠনে এক বড় সহায়ক।”

সফর শেষে স্রিমতি খাড়সে বলেন, “এ ধরনের অ্যাকাডেমি শুধু ক্রীড়া উন্নয়নের কেন্দ্র নয়, বরং জাতি গঠনের অংশ। কেন্দ্র সরকার এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলিকে উন্নত করতে এবং দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রকে বৈশ্বিক মানচিত্রে আরও উচ্চস্থানে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও জানান, খেলো ভারত নীতি ২০২৫-এর লক্ষ্য হল প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি প্রতিভাকে খুঁজে বের করে, বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া এবং ভারতের ক্রীড়া ভবিষ্যৎকে একটি সুসংহত ও টেকসই কাঠামোর মাধ্যমে গড়ে তোলা।

মোদিনগরের ‘ওয়েটলিফটিং ওয়ারিয়ার্স অ্যাকাডেমি’ এখন কেবল একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নয়, বরং ভারতের খেলাধুলার নতুন যুগের সূচক। নারী ক্রীড়াবিদদের সম্মান ও সুযোগ প্রদানের দিক থেকে এটি হয়ে উঠেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্রিমতি রাখ্শা খাড়সে ও মীরাবাই চানুর যৌথ উপস্থিতি কেবল এই প্রতিষ্ঠানকেই নয়, বরং গোটা ক্রীড়াঙ্গনকেই এক নতুন অনুপ্রেরণা দিয়েছে।