নয়াদিল্লি, ৯ জুলাই : বুধবার দেশজুড়ে চলছে সাধারণ ধর্মঘট, কেন্দ্রের ‘শ্রমিক-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী ও কর্পোরেটপন্থী’ শ্রমনীতি-র প্রতিবাদে দশটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের ডাকে এই ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
এই ‘ভারত বন্ধ’-এর ডাক দিয়েছে অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস, হিন্দ মাজদুর সভা, সেল্ফ-এমপ্লয়েড উইমেন’স অ্যাসোসিয়েশন, লেবার প্রগ্রেসিভ ফেডারেশন, ইউনাইটেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস সহ আরও অনেক সংগঠন। ওই সংগঠনগুলির মধ্যে রয়েছে কৃষক সংগঠন যেমন সংযুক্ত কিসান মোর্চা, রেলওয়ে, এনএমডিসি লিমিটেড, স্টিল শিল্পের শ্রমিক সংগঠন ও গ্রামীণ শ্রমিক সংগঠনগুলিও এই আন্দোলনে শামিল হয়েছে।
সংসদে পাশ হওয়া চারটি নতুন শ্রম কোডের বিরোধিতা এই আন্দোলনের কেন্দ্রে। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, এই কোডগুলি শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার খর্ব করে, কাজের সময় বাড়ায় এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার দায়িত্ব কমিয়ে দেয়। সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ, আউটসোর্সিং বৃদ্ধি এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রসার—এসবেরও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এর ফলে চাকরির নিরাপত্তা ও ন্যায্য মজুরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
ব্যাংক, বিমা, ডাক, কয়লা খনন, শিল্প উৎপাদন, সরকারি পরিবহন সহ বিভিন্ন পরিষেবায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। বহু গ্রামীণ এলাকায় কৃষক নেতৃত্বাধীন মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি দেখা গেছে। তবে বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ ও ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদে রাস্তায় টায়ার পোড়ানো, অবরোধ, রেল ও সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটেছে। বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যালঘুদের বাদ দিতে ষড়যন্ত্র করছে। ওড়িশায় বেরহামপুরে রেল অবরোধ ও শহর জুড়ে পিকেটিং হয়েছে। ব্যাংক, বিমা ও ডাক কর্মীরা ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে শামিল হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া সহ বিভিন্ন জেলায় জোরালো বিক্ষোভ, যাদবপুর স্টেশনে ট্রেন অবরোধ, প্ল্যাটফর্মে মিছিল সংগঠিত হয়েছে। পুদুচেরি বনধে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সরকারি পরিবহন, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ২১ দফা দাবিতে ধর্মঘট চলছে। পাঞ্জাব রোডওয়েজ, পিইউএনবিইউএস ও পিআরটিসি-র চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা ৯-১১ জুলাই তিন দিনের ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। পাঠানকোট ডিপোর সামনে ধর্ণা চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০, ২০২২ ও ২০২৪ সালে দেশজুড়ে এই ধরনের ধর্মঘটে কোটি কোটি শ্রমিক অংশ নিয়েছিলেন, শ্রমিকস্বার্থে নীতিমালা বদলের দাবি তুলেছিলেন। সারাদেশে এই ধর্মঘট শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের দাবি ও ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রের শ্রমনীতি ও অর্থনৈতিক সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলন আরও জোরালো হচ্ছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের।

