গ্যাংটক, ৯ জুলাই: সিকিমের জন্য ২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমে একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের গ্যাংটক কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সিকিমে মোট ৩৫% বৃষ্টিপাতের অভাব দেখা গেছে। এটি পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বর্ষা ঘাটতি এবং এই ঘাটতির প্রভাব রাজ্যের কৃষি, পানি সরবরাহ এবং পরিবেশের উপর পড়তে শুরু করেছে।
সিকিমের সবকটি জেলা বর্ষার তীব্র ঘাটতির শিকার হলেও, গ্যাংটক আবহাওয়া কেন্দ্রের পরিচালক জি.এন. রাহা জানান, রাজ্যের পাঁচটি জেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। গ্যালশিং জেলা ৪৯% বৃষ্টিপাতের অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে গ্যাংটক, যেখানে ৩৭% বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে, এবং মাংগান, পাকিয়ং ও নামচি জেলার ঘাটতি যথাক্রমে ৩৪%, ২৩% এবং ২০%। শুধুমাত্র সোরেঙ্গ জেলা একমাত্র জেলা যা “স্বাভাবিক” বৃষ্টিপাতের সীমার মধ্যে রয়েছে, যেখানে বৃষ্টির পরিমাণ ১৩% কম।
এই ঘাটতির ফলে সিকিমের কৃষি উৎপাদন, পানীয় জল সরবরাহ এবং অন্যান্য পরিবেশগত খাতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বছরের পর বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পরে এখন এই ধরনের ঘাটতি রাজ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানব জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
এটি সিকিমের জন্য একটি বড় পরিবর্তন, কারণ গত চার বছর ধরে রাজ্যে স্বাভাবিক বা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে সিকিমে ৬৮% অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। তার আগে ২০২৩ সালে ১৮%, ২০২২ সালে ৪৪% এবং ২০২১ সালে ১৫% অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত সিকিমের কৃষি খাতকে চাঙ্গা করে তুলেছিল, তবে এবছর বর্ষার ঘাটতি কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিকিমের কৃষি খাত ঐতিহ্যগতভাবে বর্ষার উপর নির্ভরশীল, এবং বৃষ্টির অভাবে ধান, মুগ, মাচ্চা, সর্ষে ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে সেচ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়, তাই কৃষকরা বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ঘাটতির কারণে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজ্যের কৃষকরা বিপদে পড়েছেন।
এছাড়া পানীয় জল সরবরাহও কঠিন হতে পারে। রাজ্যের বেশ কিছু শহর এবং গ্রামে পানির স্তর কমে যাওয়ায় গৃহস্থালির জন্য পানি সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। পানীয় জল সরবরাহের জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে, এটি জল সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা আরো বড় সামাজিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সিকিমের পাহাড়ি পরিবেশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। বৃষ্টিপাতের ঘাটতি এবং তার পরিণতিতে পানির অভাব রাজ্যের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উদ্ভিদজগতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সিকিমের অনেক নদী এবং খাল তার উৎসে পাহাড়ি বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল, এবং এই অবস্থার ফলে পাহাড়ে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের ঘটনা বৃদ্ধি পেলে মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বিপুল ক্ষতি হতে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, চলমান বৃষ্টিপাতের ঘাটতির জন্য সিকিমের রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তারা বলেন, “কৃষকদের জন্য জল ব্যবস্থাপনা কৌশল গড়ে তোলা, পানীয় জল সরবরাহের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা এবং পরিবেশের সুরক্ষায় উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।”
প্রাকৃতিক পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টির ফলে সিকিমের সুষম উন্নয়ন এবং টেকসই পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিকিমের সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সিকিমের দুর্বল পাহাড়ি পরিবেশ এবং জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এখনই দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। স্থানীয় কৃষকদের জন্য ত্রাণ ও সহায়তা, পাশাপাশি জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় উদ্ভাবনী পরিকল্পনা প্রয়োজন।
যেহেতু সিকিমের বর্ষা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, তাই সরকারের কাছে বিশেষভাবে কন্ট্রোলড ম্যানেজমেন্ট, পানি সরবরাহ, সেচ ব্যবস্থা এবং কৃষি পুনরুদ্ধারে সহায়তা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

