মমতা বিজেপি-কে আক্রমণ করে বললেন, অসম সরকারের এনআরসি নোটিস ‘গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ’

কলকাতা, ৮ জুলাই :পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মঙ্গলবার বিজেপি শাসিত অসম সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন, যখন সেখানে একটি বিদেশী ট্রাইবিউনাল কুচবিহারের এক কৃষককে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে নোটিস জারি করে। মমতা এই পদক্ষেপটিকে “গণতন্ত্রের উপর একটি সিস্টেমেটিক আক্রমণ” বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন যে, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি কার্যকর করার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের কোনো এখতিয়ার নেই।

মমতা ব্যানার্জি বলেন, “এই ঘটনা একটি বিপজ্জনক অত্যাচার এবং প্রান্তিক জনগণের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভেদী আক্রমণ। এটি একটি সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা, যা গণতান্ত্রিক সুরক্ষাগুলোর উপর বিজেপির বিপজ্জনক এজেন্ডাকে উন্মোচন করে।”

বিজেপির শাসনে অসম সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে মমতা বলেন, “আমি অত্যন্ত বিস্মিত এবং গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, অসমের বিদেশী ট্রাইবিউনাল কুচবিহারের একজন রাজবংশী কৃষক উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে নোটিস পাঠিয়েছে, যদিও তিনি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে দিনহাটায় বসবাস করছেন এবং তার কাছে বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে।”

মমতা আরও বলেন, “এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে বিজেপি অসমে NRC প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বাংলায় জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। বিশেষত প্রান্তিক জনগণের উপর এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ।”

মমতা ব্যানার্জি দেশের অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিজেপির বিভাজক এবং দমনমূলক মেশিনারির বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী দলকে একত্রিত হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ কখনও এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে না যখন ভারতের সাংবিধানিক তন্তুগুলি ছিঁড়ে ফেলা হবে।”

তিনি বলেন, “বিজেপির এই সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন জনগণের প্রতি অবমাননা এবং গণতান্ত্রিক সুরক্ষা ধ্বংসের একটি ক্ষতিকর প্রচেষ্টা।”

বিষয়টি যখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, কৃষক উত্তম কুমার ব্রজবাসী সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান যে, তিনি বিস্মিত হয়েছেন যখন তাকে অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে নোটিস দেওয়া হয়, যদিও তিনি কখনও কুচবিহারের বাইরে যাননি। ব্রজবাসী জানিয়েছেন, তিনি গত পঞ্চাশ বছর ধরে দিনহাটায় বসবাস করছেন এবং তার কাছে সকল বৈধ ভারতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

এদিকে, বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে দোষারোপ করেছে এবং দাবি করেছে যে, পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বেআইনি অভিবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে ভুয়ো ভারতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপির দাবি, এসব পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে দেওয়া হচ্ছে এবং কিছু মানুষকে ভুলভাবে নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এই ঘটনা বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। এনআরসি বিষয়টি এক নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরও তীব্র হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাজ্যের নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এনআরসি ইস্যুকে ব্যবহার করছে।

বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এটি একটি প্রমাণ যে তৃণমূল কংগ্রেস অবৈধ অভিবাসীদের সমর্থন করছে এবং রাজ্যে এনআরসি কার্যকর হওয়ার পথ প্রশস্ত করছে।”

অন্যদিকে, মমতা ব্যানার্জি তার বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, বাংলা জনগণের স্বার্থে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির এই প্রয়াসকে প্রতিরোধ করবে।

তিনি আরও বলেন, “বিজেপি তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সেবা করতে বিশ্বাসী। সিকিমের জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য আমাদের দল সদস্যদেরকে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে উত্সাহিত করে। নতুন সদস্যদের এই উদ্যোগে আমাদের দলের শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং সিকিমের উন্নয়নে আমরা আরও সফল হব।”

নতুন সদস্যদের একাধিক সামাজিক কাজ ও জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম পেনডাম বিধানসভা থেকে আসা গোমা সুভা, মোমথি সুভা এবং নাভিকা সুভা ইত্যাদি স্থানীয় মহিলাদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তাঁরা সমাজের নানা সমস্যার প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছেন এবং তাঁদের এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।

বিক্রম গুরুং, যারা ইয়োকসম তাসিডিং থেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন, বলেছেন, “সিকিমের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিজেপি যে পথচলা শুরু করেছে, তাতে আমি সঙ্গী হতে পেরে গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে ভারত এবং সিকিম আরও শক্তিশালী হবে, এবং আমরা এই পরিবর্তন আনার অংশ হতে চাই।”

এছাড়া, নতুন সদস্যদের মধ্যে কিছু জনসেবক এবং শিক্ষাবিদও রয়েছেন, যাঁরা স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বছরের পর বছর কাজ করে আসছেন। তাঁদের মতে, বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁরা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে এবং তাঁদের সমস্যার সমাধানে কাজ করতে পারবেন।

ড. থাপা নতুন সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এটি একটি সময় যখন সিকিমে শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং সততার সাথে জনগণের সেবা প্রয়োজন। সিকিমের জনগণের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের দল একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। নতুন সদস্যদের দায়িত্ব হবে তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সাথে কাজ করে, তাঁদের সমস্যাগুলি সমাধান করা এবং দলের বার্তা পৌঁছানো।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন সদস্যরা তাঁদের অভিজ্ঞতা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিকিমের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। তাঁদের হাতে আমরা নতুন শক্তি ও উদ্যম দেখতে পাচ্ছি।”

বিজেপি সিকিমে নতুন সদস্যদের যোগদানকে একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে দেখছে। স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে দলের প্রতি আস্থা বাড়ানো সিকিমের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বিজেপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, এই নতুন সদস্যরা দলের লক্ষ্য ও আদর্শের সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে দলের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তাঁদের সক্রিয়তা ও নেতৃত্ব সিকিমের রাজনৈতিক চিত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, এমনটাই তাঁদের বিশ্বাস।

এই যোগদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিকিম বিজেপি একটি নতুন শক্তি পেয়েছে এবং এর মাধ্যমে সিকিমে আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিবর্তন শুধু দলের উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং সিকিমের জনগণের জন্য নতুন সুযোগ ও উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।