নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ জুলাই:
আজ কসবা ল কলেজের ভিতর গণধর্ষণ কাণ্ডের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা এই রিপোর্ট প্রদানের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সাংসদ বিপ্লব দেব গোটা ঘটনার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে। তিনি বলেন, একজনের বিরুদ্ধে এত অপরাধ থাকা সত্ত্বেও চাকরি কে দিল? অশোক দেব, তৃণমূল বিধায়ক। নিরাপত্তার দায়িত্ব সানফ্লাওয়ার এজেন্সি, সেটিও তৃণমূল নেতাদের। তারাই ধর্ষণের জায়গা নির্ধারণ করেছিল। তাই পুরো ঘটনাটিই তৃনমূলের করণীয়।
যারা এই নিয়োগ করেছে, তাদেরকেও গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক, এমনটাই দাবি জানিয়েছেন সাংসদ বিপ্লব। তিনি আরো বলেন, এই ধর্ষণের ঘটনায় একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ভোটব্যাংকের স্বার্থে এক বিশেষ গোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলাকে দুষ্কৃতীদের বাংলায় পরিণত করেছেন। এই ধর্ষণ ও হিংসা রাজ্য স্পন্সরড। এর দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এদিন এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন তিনি।
এদিন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড: সতপাল সিং বলেন, এই ২৫শে জুনের ঘটনা যেমন নৃশংস, ঠিক গত বছর কলকাতার মেডিক্যাল কলেজেও একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। গোটা দেশ এই নিয়ে উত্তাল হয়েছিল। এখন আবার আইন কলেজে, যেখান থেকে আইনজীবী, বিচারক তৈরি হয়, সেই প্রতিষ্ঠানে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে এ ঘটনা আরও লজ্জাজনক। আমরা গিয়ে দেখেছি, বাংলায় নারীদের উপর অত্যাচার ও অপরাধের হার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এমন বহু মামলা পড়ে আছে, যেখানে আজও ন্যায় মেলেনি। আমরা ধারণা করিনি যে ঘটনাস্থলে যেতে বা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব।
তিনি আরো বলেন, নির্যাতিতার হাতে লেখা অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের নাম পুলিশ কেটে ‘জে’, ‘এম’, ‘পি’ ইত্যাদি অক্ষর বসিয়ে দিয়েছে। মিডিয়াতেই অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ হয়েছিল। প্রধান অভিযুক্তের নাম সবাই জানে। এভাবে পুলিশের নাম মুছে দেওয়ার ঘটনা জীবনেও দেখিনি। এমন কাজ পুলিশ না করলে সম্ভব নয়। যে পুলিশ এফআইআর-এ পরিবর্তন করে, সে কখনও নির্যাতিতাকে ন্যায় দিতে পারে না। পুলিশের কথামতো, প্রধান অভিযুক্তের নামে ২০১৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ১১টি মামলা রয়েছে। ৪ বার গ্রেফতারও হয়েছে সে। তবুও তাকে ফের ওই ল কলেজে কাজ দেওয়া হয়। কলেজের স্টাফ, এমটিএস, গার্ড নিয়োগেও কারা জড়িত? দক্ষিণ কলকাতার ওই ল কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান স্থানীয় বিধায়ক আশোক দেব। তারই ইচ্ছায় প্রধান অভিযুক্তকে সেখানে চাকরি দেওয়া হয়।
একজন দাগী তৃণমূল ছাত্রনেতা, ক্যাম্পাসের গুন্ডা। এই ঘটনার সঙ্গে আরও তিনজন জড়িত — দু’জন ছাত্র ও এক গার্ড। এফআইআর বদলের ধরন দেখে মনে হচ্ছে আরও কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করছে না। আমরা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। পুলিশের দেওয়া নম্বরে ফোন করি। কেউ উত্তর দেয়নি। এসএমএস করলেও সাড়া আসেনি। বলা হয়, পুলিশি নিরাপত্তায় আছে। কোথায়, তা কেউ জানে না।
তিনি আরো বলেন, বাংলার আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। হত্যাকাণ্ড, গণধর্ষণ, লুট, দাঙ্গা — এ সব নিত্যদিনের ঘটনা। অধিকাংশ অপরাধী তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ। প্রশাসন ও পুলিশ এদের রক্ষা করে। ভোটের সময়ও এরা সন্ত্রাস চালায়। সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। ভোটারদের বাধ্য করা হয় তৃণমূলকে ভোট দিতে।
তিনি এদিন দাবি করেন, অভিযুক্তদের নাম এফআইআর -এ মুছে ফেলার কারণ তদন্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ, উচ্চপর্যায়ের বা কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত করতে হবে। শুধু এই ঘটনা নয়, মেডিক্যাল কলেজ, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দাগী তৃণমূলকর্মী নিয়োগ ও অপরাধের ঘটনা হচ্ছে। পুলিশ কমিশনারকেও বলা হয়েছে, নারী নির্যাতনের এফআইআর নথিভুক্তি ও তদন্ত ডিএসপি স্তরের আধিকারিককে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যারা দায়িত্বে গাফিলতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

