নয়াদিল্লি, ১ জুলাই: আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ৩৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির মুখে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়া। দিল্লি থেকে ভিয়েনা অভিমুখী ফ্লাইট AI 187 উড্ডয়নের পর প্রায় ৯০০ ফুট উচ্চতা হারায়, এবং “ডোন্ট সিঙ্ক ” সতর্কবার্তা জারি করে বিমানের গ্রাউন্ড প্রক্সিমিটি ওয়ার্নিং সিস্টেম । শুধু তাই নয়, ওই বিমানে “স্টিক শেকার”, “স্টল ওয়ার্নিং” এবং জিপিডব্লিউএস বার্তা তিনবার সক্রিয় হয় বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন তদন্ত শুরু করেছে এবং ফ্লাইটের উভয় পাইলটকেই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উড়ান ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মারফত জানা গেছে, গত ১৪ জুন ভোররাতে ২:৫৬ মিনিটে বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি দিল্লি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। সেই সময় দিল্লিতে ঝড়-বৃষ্টি চলছিল। ঠিক উড্ডয়নের পরেই “”স্টিক শেকার” জিপিডব্লিউএস “ডোন্ট সিঙ্ক” বার্তা দেখা যায়, যা নির্দেশ করে যে বিমান হঠাৎ করে খুব নিচে নেমে যাচ্ছে। এরপর আরও একবার “স্টল ওয়ার্নিং” এবং দু’বার জিপিডব্লিউএস সতর্কতা জারি হয়।
তবে পাইলটরা তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন এবং বিমানটি নিরাপদে ভিয়েনা পৌঁছায়। পুরো যাত্রাটি ৯ ঘণ্টা ৮ মিনিট সময় নেয়। পরবর্তীতে বিমানটি ইউরোপে একটি নির্ধারিত কারিগরি বিরতির পর নতুন ক্রু নিয়ে টরন্টোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিমানের ফ্লাইট রিপোর্টে শুধু উল্লেখ করা হয়েছিল যে “উড্ডয়নের পর ঝড়ের কারণে স্টিক শেকার সক্রিয় হয়েছিল।” কিন্তু ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার বিশ্লেষণে জানা গেছে, সেখানে ছিল আরও দুটি বড় সতর্কবার্তা — ওজিপিডব্লিউএস “ডোন্ট সিঙ্ক” এবং স্টল ওয়ার্নিং — যা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি। এই তথ্য গোপন রাখার কারণে ডিজিসিএ-এর কড়া নজরে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ।
মাত্র ৩৮ ঘণ্টা আগে, গত ১২ জুন, আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI 171। এই দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রী প্রাণ হারান, যা ছিল ভারতের ইতিহাসে প্রথম বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনা।
ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো এই দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে এবং বিমানের ব্ল্যাক বক্স ইতিমধ্যে উদ্ধার করে দিল্লিতে বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইঞ্জিন ফেইলিওর, পাওয়ার লস, প্রযুক্তিগত ত্রুটি কিংবা পাইলটের ভুল—সবই সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। তবে চূড়ান্ত তথ্য ব্ল্যাক বক্স বিশ্লেষণের পরই মিলবে।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুইটি বড় ঘটনা এবং দুটিতেই গুরুতর নিরাপত্তা সতর্কতা এয়ার ইন্ডিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ফ্লাইট পরিচালনার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে বিশেষজ্ঞ মহল। ডিজিসিএ-এর এই তদন্ত কতটা গভীরতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এগোয়, তার উপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যতে যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং এয়ার ইন্ডিয়ার ভাবমূর্তি।

