কসবায় আইন কলেজে গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার তিন, স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ জাতীয় মহিলা কমিশনের

কলকাতা, ২৭ জুন : এক তরুণীকে দক্ষিণ কলকাতার একটি প্রখ্যাত আইন কলেজের ভিতরে ধর্ষণের অভিযোগে তিনজন যুবককে গ্রেপ্তার করেছেন, পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অভিযোগকারী তরুণী এবং দুই অভিযুক্তই দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের (নিউ ক্যাম্পাস) শিক্ষার্থী, আর তৃতীয় অভিযুক্ত একজন প্রাক্তন ছাত্র।

নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কলেজেরই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন ল’কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং কর্মী। বাকি দু’জন কলেজের বর্তমান পড়ুয়া। বুধবার, ২৫ জুন এই ঘটনার পর নির্যাতিতা তরুণী কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয় পার্ক সার্কাসের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই গ্রেফতার করা হয়। এক জনকে মধ্যরাতে ধরে পুলিশ। ধৃতদের শুক্রবার আলিপুরের আদালতে হাজির করানো হবে।

পুলিশের তরফে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। সূত্রের খবর, তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাঁরা সকলেই ল’কলেজের সঙ্গে যুক্ত। এই তিন অভিযুক্তের মধ্যে এক জন কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণ করেন। ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্তদের ‘জে’, ‘এম’ এবং ‘পি’ নামে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।অভিযোগ পাওয়ার পর তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সাক্ষীদের বয়ানও রেকর্ড করে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয় এবং বর্তমানে তা ঘিরে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, এফআইআরে নাম থাকা দু’জনকে বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়। তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থশঙ্কর শিশু রায় উদ্যানের সামনে থেকে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে এক জনকে এবং ৭টা ৩৫ মিনিটে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তৃতীয় অভিযুক্তকে। তিন জনের কাছ থেকেই নিয়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের মোবাইল ফোন। তাঁদের শুক্রবার আদালতে হাজির করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে চাইবে পুলিশ।

পুলিশ বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত তরুণীর গোপন বিবৃতি আদালতের বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড করছে। এছাড়া আইন কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে অপরাধের স্থানেও ক্যামেরা ছিল। পুলিশ কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এ ঘটনাটি শহরের মধ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠিয়েছে, বিশেষত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে এমন ঘটনা ঘটার পর।

বিরোধী দলের নেতা সুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছেন, “কলকাতা ও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এবার মমতা ব্যানার্জি তত্ত্ব দেবেন ‘ভালোবাসার সম্পর্ক’ কিংবা ঘটনাটিকে ‘সামান্য ঘটনা’ হিসেবে উপস্থাপন করবেন। পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী এক মিনিটও তাঁর পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। এটা একটি বড় ঘটনা, এবং আমরা এর শেষ পর্যন্ত বিচার চাই।”

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, যিনি বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘায় রথযাত্রা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছেন। এদিকে, কসবার আইন কলেজের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই বিবৃতি জারি করে মহিলা কমিশন। তারা জানিয়েছে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রহাটকর এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আইন অনুযায়ী যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।

শুক্রবার সকালে কসবার আইন কলেজে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বুধবারই কসবা থানায় তরুণী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পার্ক সার্কাসের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ওই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। বয়ান রেকর্ড করা হয় সাক্ষীদের। এর পর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের সামনে থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তৃতীয় অভিযুক্ত ধরা পড়েন। শুক্রবার তাঁদের আলিপুরের আদালতে হাজির করানো হবে।