অসমের বিপন্ন সোনালী ল্যাঙ্গুর পাচারের ছক ভেস্তে দিল মুর্শিদাবাদ পুলিশ, উদ্ধার ৪টি বিরল প্রজাতির বনমানুষ, গ্রেফতার ৬

মুর্শিদাবাদ, ২২ জুন: পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা এলাকায় এক গোপন সূত্রে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আটক করল ছয় জন পাচারকারীকে এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করল চারটি সোনালী ল্যাঙ্গুর । এই বিরল প্রজাতির বনমানুষ ভারতের অন্যতম বিপন্ন প্রাণী, যা সাধারণত অসমের পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ ভুটানের কিছু এলাকায় পাওয়া যায়। ঘটনাটি ঘটে শনিবার, যখন বহরমপুর মহকুমার অন্তর্গত ভরত রেলগেটের কাছে পুলিশ দুটি গাড়িকে থামিয়ে তল্লাশি চালায় এবং অবৈধভাবে পাচার হওয়া ল্যাঙ্গুরগুলো উদ্ধার করে।

গ্রেফতার হওয়া ছয় পাচারকারীর নাম—মিঠু দাস (৩৩), টিটু দাস (২৯), সামিল হোসেন বিশ্বাস (৩৯), রফিকুল মণ্ডল (২৯), হাসিবুল মণ্ডল (২৫) এবং বিশ্বজিৎ বাগ (২৩)। এদের বিরুদ্ধে ভারতের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের অধীনে কড়া ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই পাচারকারীরা অসম থেকে প্রাণীগুলো সংগ্রহ করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে অন্য রাজ্যে পাচারের চেষ্টা করছিল। বর্তমানে গোটা পাচার চক্রের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা জানতে বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

উদ্ধার হওয়া সোনালী ল্যাঙ্গুর প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম ট্র্যাচিপিথেকাস গি, এবং এটি ভারতীয় বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন-এর তফসিল-I তালিকাভুক্ত একটি প্রাণী। বনদপ্তর ও বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একটি দল ইতিমধ্যে উদ্ধার হওয়া ল্যাঙ্গুরগুলোর শারীরিক পরীক্ষা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। প্রাণীবিজ্ঞানীদের মতে, বনাঞ্চল ধ্বংস ও অবৈধ পাচারের ফলে এই প্রজাতি চরমভাবে বিপন্ন হয়ে উঠেছে। সোনালী ল্যাঙ্গুর সাধারণত সামাজিক স্বভাবের এবং এদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাচার করলে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

এই ঘটনায় পরিবেশবিদ ও পশুপ্রেমীরা পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং এর মাধ্যমে বনজ প্রাণীদের রক্ষার জন্য প্রশাসনের সদিচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে বলে মত দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর-পূর্ব ভারতে গড়ে ওঠা একটি সংগঠিত প্রাণী পাচার চক্র বহু বছর ধরে সক্রিয়, এবং এদের দমন করতে হলে প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের সম্মিলিত অভিযান। মুর্শিদাবাদ পুলিশের এই সফল অভিযান সেই বড় নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।