শিবগিরি, ২৪ জুন – শিবগিরি মঠে এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক স্মরণীয় ভাষণ দেন। এই ভাষণটি ছিল শ্রীনারায়ণ গুরু এবং মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে সংঘটিত ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারের শতবর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা, সামাজিক ন্যায়, এবং আধুনিক ভারতের উন্নয়নের সুস্পষ্ট দিশা ফুটে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১০০ বছর আগে শ্রীনারায়ণ গুরু ও মহাত্মা গান্ধীর সাক্ষাৎ স্বাধীনতা আন্দোলনে একটি নতুন দিশা এনে দিয়েছিল। এই সাক্ষাৎ শুধু একটি সময়ের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আজও তা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রেরণাদায়ক।”
তিনি গুরুদেব শ্রীনারায়ণ ও মহাত্মা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁদের পদপ্রান্তে প্রণাম নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শ্রীনারায়ণ গুরু মানবতার ঐক্যের যে দর্শন দিয়েছিলেন – ‘ওরু জাতি, ওরু মতম, ওরু দৈবম, মনুষ্যানু’ – আজ ভারত সেই আদর্শকে বৈশ্বিক কল্যাণে রূপ দিচ্ছে।” তিনি উল্লেখ করেন, “এক পৃথিবী স্বাস্থ্য”, “এক পরিবার, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ” – এইসব উদ্যোগগুলি সেই ঐক্যের ভাবনাকেই বিশ্বজুড়ে পৌঁছে দিচ্ছে।
শিক্ষা, সংহতি ও শিল্পোন্নতির গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গুরুদেব বলতেন – বিদ্যায় প্রজ্ঞা, সংগঠনে শক্তি, উদ্যোগে সমৃদ্ধি।” তিনি জানান, এই ভাবনা থেকেই সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে, যা মাতৃভাষায় শিক্ষাকে উৎসাহিত করছে এবং প্রযুক্তিনির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা গত ১০ বছরে যতো আইআইটি, আইআইএম, এইমস প্রতিষ্ঠা করেছি, তা আগের ৬০ বছরে হয়নি।” এর ফলে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষায় সুযোগ পাচ্ছে।
নারী ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যেখানে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, আজ সেই সব ক্ষেত্রেও তাঁরা সফলভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন – খেলাধুলা থেকে মহাকাশ পর্যন্ত।” প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর সরকার নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন-এ বিশ্বাস করে এবং এই মন্ত্র অনুসরণ করে কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, “আজ দেশ সেই সমাজ গড়ে তুলছে, যেখানে শেষ সিড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।” প্রধানমন্ত্রী জানান, পিএম-আবাস যোজনা, জল জীবন মিশন, জন-জনমন, এবং স্কিল ইন্ডিয়া অভিযানের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখতে শিখছে ও সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
অপারেশন সিন্ধুর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২২ মিনিটের মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের ঘায়েল করা হয়েছে – তা ছিল ভারতীয় সেনার আত্মনির্ভরতা ও শক্তির প্রতীক।” তিনি জানান, দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্র বিশ্বমঞ্চে ভারতের মর্যাদা আরও বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার “শিবগিরি সার্কিট” নির্মাণ করছে, যাতে শ্রীনারায়ণ গুরুজীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিকে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের অংশ করা যায়। তাঁর মতে, “শ্রীনারায়ণ গুরু আমাদের জন্য এক আধ্যাত্মিক দিশারী, যাঁর আদর্শ আমাদের আমৃত্যু পথ দেখাবে।”
শেষে প্রধানমন্ত্রী শিবগিরি মঠের সমস্ত সন্ন্যাসী ও সাধুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আপনারা আমাকে নিজের বলেই ভাবেন – এর চেয়ে আত্মিক সুখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না।”

