নয়া দিল্লি, ২৪ জুন: ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং চীনের কিংদাও শহরে অনুষ্ঠিতব্য সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। ২৫ ও ২৬ জুন পর্যন্ত চলবে এই দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বৈঠক, যেখানে এসসিও সদস্যভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা একত্রিত হবেন আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা ও পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সমন্বয় আরও মজবুত করার লক্ষ্যে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ইরান ও বেলারুশ। চীন ২০২৫ সালের জন্য এসসিও-র সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে এবং এবারের থিম নির্ধারণ করেছে— “উৎকর্ষের পথে সাংহাই চেতনার ধারক: এগিয়ে চলুক এসসিও”। এই থিমের অধীনেই এবারের প্রতিরক্ষা বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এসসিও-র প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের এই বৈঠকে রাজনাথ সিং ভারতের পক্ষ থেকে সংস্থার মূলনীতিগুলোর প্রতি অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি তুলে ধরবেন ভারতের দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি, যা শান্তি, নিরাপত্তা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। একইসঙ্গে তিনি সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ, ধারাবাহিক এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন। ভারত মনে করে, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্তরেও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বৈঠকের ফাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং চীন এবং রাশিয়াসহ একাধিক অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। এই আলোচনা গুলোর লক্ষ্য হবে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গভীর করা, সামরিক সরঞ্জাম, প্রযুক্তি বিনিময় এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত কৌশলগত বোঝাপড়া জোরদার করা। বিশেষ করে, ভারত-চীন এবং ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈঠকগুলোতে নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসতে পারে বলে কূটনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত ২০১৭ সালে এসসিও-র পূর্ণ সদস্যপদ অর্জন করে এবং ২০২৩ সালে এই সংস্থার ঘূর্ণায়মান সভাপতিত্ব করে সফলভাবে একাধিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল। ভারত বরাবরই এসসিও-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক মঞ্চ হিসেবে দেখে, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ভারতের মতে, এসসিও-র কার্যক্রমে সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনাহস্তক্ষেপ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মতো মৌলিক নীতিগুলোর প্রতিফলন ঘটে— যা ভারতের কূটনৈতিক নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এসসিও-র মতো প্ল্যাটফর্মগুলিতে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করে তুলছে। বিশেষ করে যখন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, তখন এই ধরনের প্রতিরক্ষা সংলাপ ও সহযোগিতা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করছে।
চলমান বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও অর্থনৈতিক সংযুক্তি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর। রাজনাথ সিং বৈঠকে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার পাশাপাশি, এসসিও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে যে বার্তা বেরিয়ে আসবে, তা শুধু এসসিও অঞ্চলেই নয়, গোটা আন্তর্জাতিক মহলেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।
2025-06-24

