বীরভূম, ২২ জুন: পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল বীরভূম। জেলার লাভপুর থানার অন্তর্গত হাতিয়া গ্রামে শনিবার সকালে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিন জনের। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। এলাকায় ছড়িয়েছে চরম উত্তেজনা। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দাপট কায়েম নিয়ে বিরোধ চলছিল হাতিয়ায়। শুক্রবার রাত থেকেই সেই বিবাদে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা শনিবার সকালে রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘর্ষে। অভিযোগ, শেখ মইনুদ্দিন ও তাঁর সহযোগী শেখ মুস্তাফি বেশ কিছুদিন ফেরার ছিলেন। তাঁরা এদিন সকালে ফের গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধা দেন প্রতিপক্ষ শেখ মনির ও তাঁর অনুগামীরা।
সেই সময় হাতিয়ার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয় মারপিট। পরে তা রূপ নেয় বোমাবাজিতে। স্থানীয়দের দাবি, প্রথমে পিছু হটলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করেন মইনুদ্দিন ও মুস্তাফি। তখনই ছাতিম পুকুরপাড় এলাকায় মনিরের দল বোমা বাঁধছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, সেখানেই আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিন জন। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রামবাসীদের মতে, বিবাদমান দুই পক্ষই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। যদিও এই ঘটনায় দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। তবু এই ঘটনায় ফের রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বীরভূম, বিশেষ করে অনুব্রত মণ্ডল এবং কাজল শেখের প্রভাববিস্তার করা অঞ্চল।
ঘটনার খবর পেয়েই লাভপুর থানার পুলিশ তদন্তে নামে। যদিও সকালবেলা উত্তেজনার জেরে প্রথমে গ্রামে প্রবেশ করতে পারেনি পুলিশ। পরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী।
বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, বিস্ফোরণে মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তাধীন। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, গত বছর মার্চ মাসেও এই হাতিয়া গ্রাম থেকেই অস্ত্র তৈরির কারখানা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই সময় অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ দলও। ফলে হাতিয়া আবারও প্রশাসনের মাথাব্যথার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা।

