নয়াদিল্লি , ২১ জুন – ১১তম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে দেশজুড়ে আয়োজিত নানা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতের প্রাচীন যোগবিদ্যার গুরুত্ব তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আজ দেরাদূনের পুলিশ লাইনে আয়োজিত এক যোগ শিবিরে বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় এখন যোগের প্রতি আগের তুলনায় অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল, এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ যোগের উপকারিতা গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, যোগ শুধু শারীরিক অনুশীলন নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনশৈলী, যা মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগচর্চা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং জীবনযাপন-সংক্রান্ত রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
লোকসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লা সংসদ সদস্য, প্রাক্তন সদস্য ও সংসদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাভ্যাসে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, যোগ ব্যক্তি, সমাজ ও মানবজাতির মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি করে। এটি শুধুমাত্র শরীরচর্চা নয়, বরং এক সম্পূর্ণ জীবনদর্শন। তরুণ প্রজন্মকে যোগকে জীবনের অঙ্গ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যোগ মানসিক স্থিতি, আত্মবিশ্বাস ও লক্ষ্যনিষ্ঠতা গঠনে সহায়ক। তিনি যোগের বৈশ্বিক স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আজ পৃথিবীর নানা প্রান্তে লাখ লাখ মানুষ যোগদিবসে অংশ নিচ্ছেন, যা ভারতীয় সংস্কৃতির গৌরব বহন করছে।
লালকেল্লায় ব্রহ্মকুমারীদের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওম বিড়লা বলেন, এই সংস্থা ভারতীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে শান্তির বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি তাঁর ব্রাজিল সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ব্রহ্মকুমারীদের কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে ভারতীয় ভাবনার প্রতি আস্থা তৈরি করছে।
অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে উত্তর কমান্ডে ২,৫০০ সেনাসদস্যের সঙ্গে যোগাভ্যাসে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, যোগ মানসিক স্থিতি ও শারীরিক দৃঢ়তা অর্জনের অন্যতম উপায়, যা একজন সৈনিকের জন্য অপরিহার্য। ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অভিযান ভারতীয় সেনার সংযম ও দক্ষতার প্রতিফলন, যা তারা নিয়মিত যোগচর্চার মাধ্যমে অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, ভারত যখন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করছে, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে যে যোগ মানে শুধু শরীর নয়, সমাজ ও চিন্তার স্তরেও সংযোগ তৈরি করা।
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ ঝাড়খণ্ডে একটি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শিশুদের প্রতি আহ্বান জানান যে, তারা যেন ছোটবেলা থেকেই যোগচর্চা শুরু করে। অন্যদিকে, দিল্লিতে প্রতিরক্ষা সচিব ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও যোগাভ্যাস করেন। দিল্লির ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল এবং আর্মি হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক সেনাকর্মী, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীরা অংশ নেন। পাশাপাশি পরিবেশরক্ষার বার্তা দিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও পালন করা হয়।
এই দিনটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল “One Earth, One Health”, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে গুরুত্ব সহকারে উঠে আসে। তিনি বলেন, যোগ ভারতের উপহার হলেও এটি এখন গোটা মানবজাতির জন্য। এটি একটি ভাবনা নয়, একটি প্রয়োগযোগ্য দর্শন—যা দেশ, ধর্ম ও সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবকল্যাণে কাজ করে। সার্বিকভাবে, এই যোগ দিবসের বার্তা ছিল একটাই—যোগকে ট্রেন্ড হিসেবে নয়, বরং প্রতিদিনের অভ্যাস হিসেবে গ্রহণ করা, যা জীবনে শান্তি, স্থিতি ও সুস্থতা নিয়ে আসে।
2025-06-21

