গোলাপী রঙ চিহ্নিত করবে পুর নিগম এলাকার অটো, নয়া নিয়মে বাড়বে কড়া নজরদারি : পরিবহণ মন্ত্রী

আগরতলা, ১৭ জুন : আগরতলা পুর নিগম এলাকায় চলাচলকারী অটোরিক্সাগুলিকে অন্য মহকুমার অটো থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করার জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী আজ সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, এখন থেকে পুর নিগম এলাকার সমস্ত অটোরিক্সার সামনের অংশ গোলাপী রঙের হবে।

তাঁর সাফ কথা, প্রতিটি অটোকে রুট পারমিট স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে এবং কেউই নির্ধারিত পারমিটের সীমা অতিক্রম করতে পারবেন না। বিশেষ প্রয়োজনে, যেমন চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে বা বিমান যাত্রার ক্ষেত্রে, বাইরের অটোদের নিগম এলাকায় প্রবেশের অনুমতি মিলবে যথাযথ প্রমাণপত্র দেখিয়ে। অন্যথায়, এই নিয়ম ভঙ্গকারী অটোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পুনঃঅপরাধের ক্ষেত্রে জরিমানাও ধার্য হবে।

তাঁর বক্তব্য, ১৫ কিলোমিটারের নির্ধারিত সীমার বাইরে কোনও অটো চলাচল করলে কড়া নজরদারি চালানো হবে। অন্য মহকুমার পারমিটপ্রাপ্ত অটো যাতে অবৈধভাবে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য ১৩টি নাকা পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকদের দিয়ে কড়া নজরদারি চালানো হবে। চন্দ্রপুর, চম্পকনগর (সাধুপাড়া), হাওয়াইবাড়ী, সিধাই-মোহনপুর, শালবাগান, আমতলী ও বিশালগড়ে এসব পয়েন্টে নজরদারি চালানো হবে।

এছাড়াও ব্যক্তিগত রেজিস্ট্রিকৃত ইকো, মারুতি বা অটো গাড়িগুলি স্কুল সাইনবোর্ড লাগিয়ে ছাত্রছাত্রী ও অফিস কর্মীদের বহন করছে — যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ জারি করে জানানো হবে যে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক লাইসেন্সপ্রাপ্ত গাড়িগুলিকেই এমন কাজে ব্যবহার করা যাবে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

‘হিট অ্যান্ড রান’ দুর্ঘটনার প্রসঙ্গেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ সরাসরি তাঁর ওয়ারিশ বা আইনানুগ প্রতিনিধির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে। আহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ প্রদান করা হবে।

জনসাধারণকে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সাহায্যে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার শুরু করেছে ‘রাহ-বীর’ (গুড সামারিটান) প্রকল্প। ওই প্রকল্প চলবে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এই প্রকল্পে কেউ যদি আহতদের তাৎক্ষণিক সহায়তা করেন, তবে তাঁকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে এবং কোনও আইনি জটিলতায় পড়তে হবে না।

তাঁর দাবি, দুর্ঘটনার প্রথম এক ঘণ্টাকে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এই সময়কালের মধ্যেই আহতদের চিকিৎসার আওতায় আনা গেলে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। তাই, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সাথে তিনি যোগ করেন, ‘হিট-এন্ড-রান’ দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সহ নির্দিষ্ট অনলাইন ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন গৃহীত না হলে, তা বাতিলের নির্দিষ্ট কারণ জানিয়ে দেওয়া হবে আবেদনকারীকে। সংশ্লিষ্ট মহকুমা শাসক এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জেলা শাসকের কাছে পাঠাবেন।

এইসব নির্দেশনার মাধ্যমে শহরে যানবাহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি জননিরাপত্তা ও দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব গঠনের লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্য সরকার, দৃঢ় প্রত্যয়ের সুরে বলেন মন্ত্রী সুশান্ত।