ইম্ফল, ১৬ জুন : মণিপুরের বিমান যোগাযোগের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। ১৫ জুন, ২০২৫ থেকে ইম্ফল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিষেবা বন্ধ করল এয়ার ইন্ডিয়া। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মণিপুরকে দেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যুক্ত রেখে যাত্রীদের নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবা দিয়ে এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থা।
এয়ার ইন্ডিয়ার এই প্রস্থানের সিদ্ধান্ত টাটা গোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ইম্ফল রুটে বিমান চলাচলের দায়িত্ব গ্রহণ করবে টাটা মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, যা একটি স্বল্প-মূল্যের বিমান সংস্থা।
ইম্ফল বিমানবন্দর তাদের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লিখেছে, “দীর্ঘ কয়েক দশকের অসাধারণ সেবার পর, আজ ১৫ই জুন ২০২৫, এয়ার ইন্ডিয়া ইম্ফল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের যাত্রা শেষ করছে। এই সঙ্গে মণিপুরের বিমান পরিবহন ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।” তারা আরও জানায়, যাত্রীসুবিধা যাতে ব্যাহত না হয়, সেই কারণে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এখন থেকে এই রুটে পরিষেবা চালাবে।
এয়ার ইন্ডিয়ার উপস্থিতি শুধু একটি যাতায়াত মাধ্যম ছিল না, বরং এটি বহু মণিপুরি নাগরিকের কাছে ছিল জাতীয় সংহতির প্রতীক। সেই চেনা লাল-সাদা বিমানের রঙ, কর্মীদের সৌজন্যমূলক ব্যবহার, আর নির্ভরযোগ্য সময়সূচি—সবই ছিল মণিপুরের যাত্রীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে নয়, বরং পূর্বনির্ধারিত পুনর্গঠন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত। তারা আরও উল্লেখ করেছে, “আগেকার দিনে এয়ার ইন্ডিয়ায় ভ্রমণ একটি বহু প্রতীক্ষিত অভিজ্ঞতা ছিল। দীর্ঘ ওয়েটিং লিস্ট, ছুটি বা ভর্তি মৌসুমে ভিড়, এবং পরিচিত ঘোষণার অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকা যাত্রীরা—সবকিছুই এখন শুধুই স্মৃতি।”
এয়ার ইন্ডিয়ার অবদান শুধু পরিবহনেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি শিক্ষাক্ষেত্র, স্বাস্থ্যসেবা এবং বাণিজ্যিক সংযোগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বহু মানুষের জন্য এটি ছিল বহির্বিশ্বে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ।
ইম্ফল বিমানবন্দরের শেষ বার্তায় উঠে এসেছে সেই আবেগঘন বিদায়বাণী: “ধন্যবাদ, এয়ার ইন্ডিয়া—এই দীর্ঘ বছর আমাদের সঙ্গে উড়ে চলার জন্য। তোমার অনুপস্থিতি অনুভূত হবে, তবে মণিপুরের আকাশে ও হৃদয়ে তোমার অবদান চিরকাল অম্লান থাকবে।”

