প্রান্তিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হোস্টেলের করুণ অবস্থা, বৃত্তি প্রদানেও হচ্ছে বিলম্ব, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠালেন রাহুল গান্ধী

নয়াদিল্লি, ১১ জুন : প্রান্তিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হোস্টেলের করুণ অবস্থা, বৃত্তি প্রদানেও বিলম্বের সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে প্রান্তিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পথে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। চিঠিতে তিনি দলিত, তফসিলি উপজাতি (এসটি), অতিপিছড়া শ্রেণি (ইবিসি), অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) এবং সংখ্যালঘু শ্রেণীভুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন।

রাহুল লিখেছেন, “প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী যারা প্রান্তিক শ্রেণীর, তাদের শিক্ষার পথে দুটি বড় বাধা রয়ে গেছে। প্রথমত, আবাসিক হোস্টেলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।” তিনি উল্লেখ করেন, বিহারের দরভাঙ্গায় অবস্থিত আম্বেদকর হোস্টেল পরিদর্শনের সময় তিনি সরেজমিনে দেখেছেন শিক্ষার্থীরা কীভাবে দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। চিঠিতে লেখা হয়েছে, “শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে একটি ছোট ঘরে ৬-৭ জনকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে, শৌচালয়গুলোর অবস্থা অস্বাস্থ্যকর, পরিশ্রুত পানীয় জল, মেসের সুব্যবস্থা নেই, সাথে লাইব্রেরি বা ইন্টারনেট সুবিধাও নেই।”

রাহুল গান্ধী আরও অভিযোগ করেন, দলিত ও অন্যান্য প্রান্তিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পোস্ট-ম্যাট্রিক বৃত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থা এবং বিলম্ব প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, “বিহারে তিন বছর বৃত্তি পোর্টাল কাজ করেনি। ফলে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কোনো শিক্ষার্থী বৃত্তি পায়নি।” সাথে তিনি যোগ করেন, “পোর্টাল চালু হওয়ার পরও দলিত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রাপ্তির সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমেছে — ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে ১.৩৬ লক্ষ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, সেখানে ২০২৩-২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.৬৯ লক্ষ।”

রাহুল গান্ধী বলেন, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে বৃত্তির পরিমাণ এতটাই কম যে তা অপমানজনক। যদিও তার বেশিরভাগ উদাহরণ বিহার থেকে নেওয়া হয়েছে, রাহুল গান্ধী স্পষ্ট করেছেন, এই সমস্যা সমগ্র দেশজুড়েই রয়েছে। সমস্যাগুলোর সমাধানে তিনি কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাব, প্রান্তিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত সকল হোস্টেলের পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা করা, যাতে অবকাঠামো, স্বাস্থ্যবিধি, পুষ্টি এবং একাডেমিক সহায়তার ন্যূনতম মান বজায় থাকে। বৃত্তি দ্রুত সময়ে প্রদান নিশ্চিত করা এবং বৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা এবং রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে কার্যকর বাস্তবায়নের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হোক।

চিঠির শেষে রাহুল গান্ধী লেখেন, “আপনিও নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, প্রান্তিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির মাধ্যমেই ভারতের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব। আপনার ইতিবাচক সাড়া আশা করছি।”