গন্ডাছড়ায় কৃষি ভবনের রহস্য: ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন ৩ মাস ধরে অব্যবহৃত!

গন্ডাছড়া, ১লা জুন ২০২৫: ধলাই জেলার গন্ডাছড়া মহকুমায় এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলেন মহকুমা বাসী। কৃষকদের সুবিধার জন্য ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি অত্যাধুনিক দ্বিতল ভবন উদ্বোধনের তিন মাস পরও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাজ্যের কৃষি দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথ এই দ্বিতল ভবনটি উদ্বোধন করেন। উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের তাদের উৎপাদিত ফসল খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তার ধারে বিক্রি করার পরিবর্তে একটি সুসংগঠিত স্থানে তা বাজারজাত করার সুযোগ করে দেওয়া। মহকুমাটি কৃষি প্রধান অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও কৃষকদের এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখে রাজ্য সরকার ২০২৩ সালে এই ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়।

তবে উদ্বোধনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মহকুমা প্রশাসন এবং মহকুমা কৃষি দপ্তর কৃষকদের মধ্যে এই দ্বিতল ভবনটি বন্টন করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের কিছুদিন পরেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই ভবন পরিচালনার জন্য ‘এগ্রি প্রডিউস মার্কেট কমিটি (APMC)’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই যেহেতু মহকুমাটি এডিসি (আদিবাসী স্বশাসিত জেলা পরিষদ) এলাকায় অবস্থিত, তাই এডিসি’র সদর দপ্তর কুমুলুং থেকে দ্বিতল ভবনটি নিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়।

দুটি কমিটিতেই মহকুমার শাসক দল এবং রাজ্য সরকারের দুই শরিক দলের প্রতিনিধিরা স্থান পেলেও, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দ্বিতল ভবনটি কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা গেছে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এডিসি প্রশাসনকে একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে যেহেতু ভবনটি রাজ্যের কৃষি দপ্তর থেকে নির্মিত হয়েছে, তাই রাজ্য কৃষি দপ্তর থেকেই কমিটি গঠিত হবে। বর্তমানে রাজ্য সরকারের এই চিঠির উত্তর এখনও এডিসি প্রশাসন রাজ্য সরকারকে দেয়নি।

বিষয়টির সাথে সম্পর্কিত সূত্রগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ত্রিমুখী রাজনৈতিক নেতৃত্বদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং প্রশাসনিক বিলম্বই এই ভবন বিতরণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকদের জন্য নির্মিত এই সুবিধার অব্যবহার স্থানীয় কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট সকল মহলের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের কথায়, “আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।”

এই ঘটনা সরকারি উদ্যোগ এবং বিপুল সরকারি তহবিল বরাদ্দের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরিস্থিতি যখন ক্রমশ জটিল হচ্ছে, কৃষক এবং সাধারণ নাগরিক উভয়ই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা দাবি করছেন। কবে এই ভবন কৃষকদের কাজে আসবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।