ঢাকা, ২৮ মে: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসের ২০২৬ সালের জুন মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। বিরোধী দল বিএনপি এই সময়সীমাকে “অবাস্তব ও সন্দেহজনক” বলে অভিহিত করে তীব্র বিরোধিতা করছে।
বর্তমানে সরকারের ওপর ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের তীব্র চাপ রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামানও এক কড়া বার্তায় বলেছেন, “জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার কেবলমাত্র নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকা উচিত।”
বিএনপির অভিযোগ, ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচন পেছানোর কৌশল হিসেবে জুন ২০২৬-এর কথা বলছে। তারা দাবি করছে, বছরের প্রথমার্ধে রমজান, ঈদ, কালবৈশাখী ঝড়, বর্ষাকাল, কোরবানি ঈদ ও পাবলিক পরীক্ষা থাকায় নির্বাচন আয়োজন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এক প্রেস কনফারেন্সে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা বারবার বলেছি যে ডিসেম্বরই নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত সময়। এরপর রমজান, বর্ষা ও পাবলিক পরীক্ষা থাকায় প্রশাসনিক দিক থেকেও নির্বাচন পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে হলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন জরুরি।”
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, ১৯৯৬ সালের জুন মাসে যে নির্বাচন হয়েছিল, তা ছিল ব্যতিক্রম। অন্যান্য সব নির্বাচনই বাংলাদেশে ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে শিক্ষক সমাজের ব্যস্ততা, ভোটকেন্দ্রের প্রস্তুতি, প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াও নির্বাচন আয়োজন ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনপির মতে, এখনো পর্যন্ত একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ না করে ইউনুস সরকার শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। তাদের দাবি, সরকারে থাকা “বিতর্কিত উপদেষ্টাদের” অপসারণ করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
এক সময় শেখ হাসিনার মিত্র জাতীয় পার্টিও এখন স্পষ্ট নির্বাচনী সময়সূচির দাবি তুলেছে। দলটির নেতা মাসরুর মাওলা বলেন, “নির্বাচন ছাড়া দেশে কোনো নতুন বিনিয়োগ আসবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নির্বাচন সম্পর্কিত রোডম্যাপ জানতে চায়।” তিনি আরও বলেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকার গত ছয়-সাত মাস ধরে ক্ষমতায়, কিন্তু আমরা উন্নয়নের কোনো দৃষ্টান্ত দেখিনি। বরং অপরাধ বেড়েছে, আর্থিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে।”
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি এবং বিরোধীদের দাবির মুখে এখনও নিজের অবস্থানে অনড় ইউনুস, যার ফলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, একটি অবাধ ও সময়োচিত নির্বাচনই কেবল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে। সে দৃষ্টিকোণ থেকেই ইউনুসের জুন ২০২৬-এর পরিকল্পনা নিয়ে সন্দেহ এবং উদ্বেগ প্রবল হচ্ছে।

