বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য
কুমারঘাট, ২৪ মে: বামফ্রন্ট আমলে গঠিত কুমারঘাট নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি পরবর্তীতে উন্নীত হয়ে পৌর পরিষদে রূপান্তরিত হলেও, দীর্ঘ চার দশক পেরিয়ে গেলেও মেলেনি নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য। শহরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার চরম বেহাল দশা নিয়ে চরম দুর্ভোগে পৌরবাসী। বর্ষার প্রারম্ভেই একদিনের বৃষ্টিতে কুমারঘাট শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর জলে ডুবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
প্রথম পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত বিধায়ক বিধু ভূষণ মালাকার। তারপর একে একে দায়িত্ব সামলেছেন জ্যোতিময় মালাকার, জোসনা মালাকার, নিতাই দে, বিধু ভূষণ পাল, অনামিকা মালাকার। বর্তমানে রামদলের বিশ্বজিৎ দাস কুমারঘাট পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিই বামের পরে প্রথম রামদলের প্রতিনিধি হিসেবে পৌর প্রধানের আসনে বসেছেন।
তবে পৌরপরিষদের ধারাবাহিক রূপান্তরের পরও কুমারঘাটবাসীর অভিযোগ—মূল সমস্যাগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। একদিকে রাজ্যে ও কেন্দ্রে ‘ত্রিপল ইঞ্জিন সরকার’ থাকলেও কুমারঘাটে উন্নয়ন যেন থমকে আছে। বর্ষার শুরুতেই শহরের চিত্র একেবারে করুণ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর। কিছু কিছু এলাকায় ড্রেন নির্মাণ হলেও তা অবৈজ্ঞানিকভাবে তৈরি হয়েছে, যার ফলে জল নিষ্কাশন হচ্ছে না। বহু জায়গায় ড্রেন ভরে গিয়ে জল রাস্তায় উপচে পড়ছে। বাড়িঘরে ঢুকে যাচ্ছে বৃষ্টির জল। এছাড়া ঠিকাদারি কাজেও চলছে কমিশন ভিত্তিক লেনদেন, যার ফলে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি একটানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে শহরের একাধিক ওয়ার্ডে জল জমে যায়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পৌরসভার অফিসে ঢোকার রাস্তাও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, ফলে স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হচ্ছে।
শহরের প্রায় প্রতিটি ড্রেন জঞ্জাল, প্লাস্টিক ও আবর্জনায় ঠাসা। অথচ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা—তাঁদের কার্যত নিষ্ক্রিয় বলেই অভিযোগ। শহরের রাস্তাঘাট, অলিগলি জঙ্গলে ভর্তি, আবর্জনায় ছেয়ে গেছে। দুর্গাপূজার সময়ে কিছুদিন টুয়েপের কাজ চললেও, বিগত নয় মাস ধরে সেই কাজও বন্ধ।
এদিকে পানীয় জলের সমস্যাও চরমে। জীবন মিশন প্রকল্পের আওতায় যে কাজ শুরু হয়েছিল, তা এখন পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে দুইজন ইঞ্জিনিয়ার বরখাস্ত হয়েছেন। ফলে বর্ষায় একদিকে জলজট, অন্যদিকে পানীয় জলের হাহাকার—দু’দিকেই নাজেহাল কুমারঘাট পৌরবাসী।
পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তদের গা-ছাড়া মনোভাব ও ন্যূনতম পরিকল্পনার অভাবই বারবার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে নাগরিক সমাজের তরফে। এখন দেখার, চিরচেনা এই সমস্যাগুলোর সমাধানে প্রশাসন কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

