ঢাকা, ১৭ মে : বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) শনিবার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, তাদের ঘোষিত ডিসেম্বরের নির্বাচনী সময়সীমা নিরবেই পেরিয়ে যেতে পারে, কারণ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এখনও পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনের কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছে না।
দলটির সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, ইউনূস সরকারের নয় মাস পেরিয়ে গেলেও দেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা বা প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেখা যায়নি। এর পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর চালু করা, বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার মতো নানা বিতর্কিত পদক্ষেপ সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিএনপির নেতারা আরও জানিয়েছেন, দলের নিচু স্তরের নেতাকর্মীরা এখন সরকারকে চাপে ফেলতে রাজপথে নামার জন্য জোরালো চাপ দিচ্ছে। তাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণা করে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বিএএনপি নেতা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামী-র মধ্যে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি এবং অপ্রয়োজনীয় রাজপথের আন্দোলন ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।”
বিএনপির দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করাও একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ, যার পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন থাকতে পারে। এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য অন্তর্বর্তী সরকারের শাসন দীর্ঘায়িত করা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, “নতুন নতুন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে, এবং পুরো পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা হচ্ছে—সবটাই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ।” তিনি আরও বলেন, “২৮ মে ঢাকায় আমাদের যুব সমাবেশ হবে। সেখানে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে শক্ত বার্তা দেওয়া হবে—নির্বাচন বিলম্বিত করলে তা মেনে নেওয়া হবে না।”
সপ্তাহের শুরুতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, “বিদেশি নানা সন্দেহজনক ব্যক্তি বাংলাদেশে ঢুকছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের চেয়ে বাইরের শক্তির স্বার্থ রক্ষা করছে।” সম্প্রতি, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। বিএনপির মতে, তার এই প্রত্যাবর্তন ইউনূস সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধির কৌশলের অংশ।
গত মাসে মির্জা আব্বাস আরও অভিযোগ করেন, “ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা চলছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বলছে ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখা হবে। কিন্তু যারা এই চক্রান্ত করছে, তারা কেবল ইউনূসের ভাবমূর্তিই নয়, দেশকেও মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলবে।”
বিগত কয়েক মাস ধরেই বিএনপি নেতারা নির্বাচন ডিসেম্বরেই হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছেন এবং এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে সরানোর সময় যে রাজনৈতিক ঐক্য দেশজুড়ে দেখা গিয়েছিল, তা এখন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

