আগরতলা, ১৪ মে : ত্রিপুরায় বর্ষা মানেই অঝোর বৃষ্টি, ঝড়-দমকা হাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আতঙ্ক। আর এই দুর্যোগে যাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত না হয়, সেই লক্ষ্যে আগে থেকেই তৈরি হচ্ছে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড (TSECL)। বুধবার আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হলো এক উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা ও প্রস্তুতি বৈঠক।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং, অতিরিক্ত সচিব উদয়ন সিনহা, TSECL-এর ব্যবস্থাপনা অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু, অর্থ অধিকর্তা সর্বজিৎ সিং ডোগরা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন সার্কেল ও বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
পর্যালোচনা সভায় বিদ্যুৎ মন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন—আগামী দুই মাস রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরের সমস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। শুধুমাত্র গুরুতর চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটি বিবেচনা করা হবে। মন্ত্রীর কথায়, “বর্ষাকালে বিদ্যুৎ পরিষেবা অটুট রাখা এখন আমাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। রাজ্যবাসীর স্বার্থে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”
মন্ত্রী আরও আশ্বাস দেন, বর্ষা শেষে কর্মীদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা সরকার বিবেচনা করবে।
বৈঠকে বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং বিস্তারিত আলোচনা করেন বর্ষাকালে সম্ভাব্য বিপর্যয় প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে। সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন লাইনের পরিস্থিতি, আগাম মেরামতির অগ্রগতি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে বিশেষ সতর্কতা—সবই উঠে আসে আলোচনায়। সচিব বলেন, “প্রতিটি স্তরে সমন্বয় ও দ্রুত পদক্ষেপই বিপর্যয় এড়াতে সহায়ক হবে।”
মন্ত্রী এবং সচিব দু’জনেই জোর দেন গাছ কাটার কাজে জনসচেতনতা ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর। মন্ত্রীর কথায়, “বিদ্যুৎ লাইনের উপর গাছ পড়ে পরিষেবা ব্যাহত হওয়া তো বটেই, বড় দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। তাই জনগণের উচিত এই কাজে বিদ্যুৎ নিগমকে বাধা না দেওয়া।”
বিদ্যুৎ নিগমের জেনারেল ম্যানেজার স্বপন দেববর্মা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সার্বিক তথ্য উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন ডেপুটি ও সিনিয়র ম্যানেজার তাদের এলাকার কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন। জানা যায়, অধিকাংশ এলাকার প্রাক-বর্ষা মেরামতি ইতিমধ্যেই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। যেসব জায়গায় এখনও কিছু কাজ বাকি, তা দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিষেবা নিশ্চিত করতে বাড়তি জনবল, গাড়ি, যন্ত্রাংশের কোন ঘাটতি হবে না বলেও আশ্বাস দেন ব্যবস্থাপনা অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ সভায় বারবারই জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। বলেন, “গাছ কাটা, লাইন সংস্কার কিংবা সাবস্টেশনে কাজ চলাকালীন স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন। অবৈধ হুক লাইন বন্ধ করা এবং সময়মতো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলে পরিষেবা আরও স্থিতিশীল হবে।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, গত দুর্গাপূজা ও সাম্প্রতিক বন্যার সময় বিদ্যুৎ কর্মীরা যে অসামান্য কাজ করেছেন, এবারও সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্ষাকাল মোকাবিলা করতে হবে।
পর্যালোচনা সভার শেষে ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন নিগমের অর্থ অধিকর্তা সর্বজিৎ সিং ডোগরা। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, বিদ্যুৎ বিল আদায় এবং বাজেট অনুযায়ী অগ্রগতি—এসব বিষয়ে কড়া নজর থাকবে। সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ই সফলতা আনবে।”
ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের এই প্রস্তুতি নিঃসন্দেহে একটি বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। প্রশাসনের উদ্যোগ সফল করতে হলে জনগণের সচেতনতা ও সহযোগিতা অপরিহার্য। বিদ্যুৎ নিগম ও সাধারণ মানুষ—উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে বর্ষাকালে রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা বজায় রাখতে।

