নয়াদিল্লি/ইসলামাবাদ, ১২ মে: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমনে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যা রবিবার রাত পর্যন্ত বজায় ছিল। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে প্রায় চার দিনব্যাপী তীব্র গোলাগুলি ও আকাশপথে হানার পর এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। সোমবার এই যুদ্ধবিরতির সূক্ষ্ম দিকগুলি নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “এত প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল যে, এখনই আগ্রাসন থামানোর সময়।” এরপর থেকেই উভয় দেশ গোলাগুলি বন্ধ রেখেছে, যদিও তারা সতর্ক রয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি ভাঙলে কড়া জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির পর ভারত সোমবার জানিয়েছে, তারা ৩২টি বিমানবন্দর পুনরায় সাধারণ নাগরিকদের জন্য খুলে দিচ্ছে, যা আগে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা ছিল নিরাপত্তাজনিত কারণে।
গত সপ্তাহে চার দিনের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই বেশ কিছু প্রাণহানির কথা জানিয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে বেসামরিক ও সামরিক উভয় পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বিমান হানা ও ড্রোন হামলার অভিযোগ করেছে।
সাম্প্রতিক এই উত্তেজনার সূচনা হয় ২২ এপ্রিল ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পাহালগাম উপত্যকায় এক প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার পর, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক এক জঙ্গি গোষ্ঠীকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
৭ মে ভারত জানায়, তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি টার্গেট হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ছিল জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ও সামরিক স্থাপনা। ভারতীয় বাহিনী আরও দাবি করে, পাকিস্তানের ৩৫-৪০ জন সেনা লাইন অফ কন্ট্রোলে নিহত হয়েছে এবং পাকিস্তানের অন্তত ১১টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে, যার একটি ছিল রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে রাওয়ালপিন্ডিতে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের প্রায় ২৬টি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে এবং তাদের ড্রোন ভারতের রাজধানী দিল্লির আকাশসীমায় নজরদারি চালিয়েছে। পাকিস্তান আরও জানায়, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি ফরাসি রাফালে বিমান রয়েছে। তবে ভারত এই দাবি অস্বীকার করেছে বা এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেনি। ভারত জানিয়েছে, “যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষতি স্বাভাবিক”।
পাকিস্তান অস্বীকার করেছে যে তাদের হেফাজতে কোনও ভারতীয় পাইলট ছিল। ভারতও বলেছে, “আমাদের সব পাইলট দেশে ফিরে এসেছেন।”
দুই দেশের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হলেও সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করছেন যে, যেকোনও সময় পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সোমবারের সামরিক পর্যায়ের বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

