নয়াদিল্লি, ৭ মে – ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি আজ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, ২২ এপ্রিল পহেলগামে ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় পাকিস্তানের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণিত হওয়ার পরই ভারতের তরফে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে সুনির্দিষ্ট বিমান হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ ছিল সম্পূর্ণভাবে ন্যায়সংগত এবং প্রতিরোধমূলক। এই সকালে ভারত তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে সন্ত্রাসী পরিকাঠামোকে ধ্বংস করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিক্রম মিস্রি বলেন, “পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামক একটি সংগঠন, যা লস্কর-ই-তইয়্যবার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। পাকিস্তানের সঙ্গে এই গোষ্ঠীর সংযোগ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, পাকিস্তান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং, দেশটি সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে।”
বিদেশ সচিব জানান, ২০২৪ সালের মে ও নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটির মনিটরিং টিমকে TRF-এর কার্যকলাপ সম্পর্কে ভারত আগেই তথ্য দিয়েছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে লস্কর ও জইশ-ই-মোহাম্মদের মতো সংগঠন TRF-এর মতো ছোট গোষ্ঠীর মাধ্যমে কার্যকলাপ চালাচ্ছে – এই তথ্যও জাতিসংঘে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “২৫ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেস বিবৃতিতে (টিআরএফ)-এর উল্লেখ মুছে ফেলতে পাকিস্তানের চাপ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তদন্তে দেখা গেছে যে, পহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক জড়িত ছিল।”
বিক্রম মিস্রি আরও বলেন, “এই হামলার পদ্ধতি ছিল ভারতের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিরুদ্ধে আরও হামলার পরিকল্পনা চলছিল। সেই কারণেই সময়োচিত এবং জবাবি পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।”
তিনি বলেন, “এই সকালে ভারত তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে সন্ত্রাসী পরিকাঠামোকে ধ্বংস করেছে। লস্কর-ই-তইয়্যবা, জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলিই আমাদের হামলার লক্ষ্য ছিল।”
পহেলগাম হামলার পরে জম্মু-কাশ্মীর ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, তা তুলে ধরে মিস্রি বলেন, “২৩ এপ্রিল আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু হামলার পরিকল্পনাকারী ও কার্যকরকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।”
“হামলার পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পাকিস্তান কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু অস্বীকার আর ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বারবার সতর্ক করেছে যে পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি নতুন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই, প্রতিরোধ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা একসঙ্গে নিতে হয়েছে।” উল্লেখযোগ্য যে, এই বিমান হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও গোয়েন্দা মূল্যায়ন করা হয়েছিল।

