প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত — শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পাঁচটি জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন

নতুন দিল্লি, ৭ মে: ভারতের বৃত্তিমূলক শিক্ষায় রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গুলির আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যে পাঁচটি জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্র গঠনের জন্য একটি কেন্দ্র-সহায়িত জাতীয় প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

এই প্রকল্পটি ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০,০০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার দেবে ৩০,০০০ কোটি, রাজ্য সরকার ২০,০০০ কোটি এবং শিল্প সংস্থা ১০,০০০ কোটি টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে কেন্দ্রীয় অনুদানের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।

এই প্রকল্পের আওতায় একটি “হাব অ্যান্ড স্পোক” মডেল অনুসরণ করে দেশের ১,০০০টি সরকারি আইটিআই -র উন্নয়ন এবং ৫টি জাতীয় দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এদের মধ্যে পাঁচটি জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্র গঠিত হবে। এনএসটিআই -গুলি অবস্থান করবে ভুবনেশ্বর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, কানপুর এবং লুধিয়ানায়।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো— রাজ্য সরকার ও শিল্প সংস্থার সহযোগিতায় বর্তমান আইটিআই -গুলিকে সরকারি মালিকানাধীন কিন্তু শিল্প-পরিচালিত উন্নত মানের দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরিত করা। পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যা সরাসরি শিল্পক্ষেত্রের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রকল্পে প্রতিটি আইটিআই -র নির্দিষ্ট পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত প্রয়োজন অনুসারে চাহিদাভিত্তিক বিনিয়োগের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রথমবারের মতো, প্রকল্পটি শিল্প-নেতৃত্বাধীন স্পেশাল পারপাস ভেহিকল মডেল ব্যবহার করবে যা ফলাফলভিত্তিক বাস্তবায়ন কৌশল নিশ্চিত করবে।

প্রশিক্ষক উন্নয়নেও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাক-সেবা ও কর্মরত প্রশিক্ষকদের জন্য ৫০,০০০ জন প্রশিক্ষককে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে এবং পাঁচটি এনএসটিআই-র পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।

এই প্রকল্প দেশের ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো উচ্চ-বৃদ্ধি শিল্পক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি পূরণ করবে। এটি বেকারত্ব হ্রাসে সহায়তা করবে এবং এমএসএমই খাত সহ বিভিন্ন শিল্পকে দক্ষ কর্মী সরবরাহ করবে।

ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। সেই লক্ষ্যে শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলি বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে একটি বড় চালিকা শক্তি হয়ে উঠতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে আইটিআই নেটওয়ার্কে ৪৭% বৃদ্ধি ঘটেছে এবং বর্তমানে দেশে মোট ১৪,৬১৫টি আইটিআই রয়েছে, যেখানে বার্ষিক ১৪.৪০ লক্ষ শিক্ষার্থী নাম লেখাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলি কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছাতে পারেনি এবং এর পরিকাঠামো ও পাঠ্যক্রমে মৌলিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। এই নতুন প্রকল্প সেই দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করতে চলেছে।

এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর “উন্নত ভারত” ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দক্ষতা উন্নয়নকে ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি প্রধান স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে।