ইট বালি পাথর সিমেন্ট বাঁশ বেত শিল্পীদের রুজি রোজগার কেড়ে নিয়েছে

( বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য )

আগরতলা, ৭ মে: এক সময়ে আমাদের রুজি রোজগার ভালোই ছিল। বাপ ঠাকুর দাদারা এই কাজ করে আমাদের প্রতিপালন করেছেন। আমরা চার ভাই তিন বোন। পিতা মাতা সন্তান সন্ততি মিলে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭ জন। সংসার প্রতিপালনে তাতে ও কোনো সমস্যা ছিল না। কাজ করে যে অর্থ পাওয়া যেত সেই অর্থ দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলত। কিন্তু এখন আর সেই ধরনের কাজকর্ম নেই। ফলে সংসার চলে না। বিকল্প কাজ করে কোনভাবে সংসারের চাকা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই সমস্ত কথাগুলো বলছিলেন সমিরন মালাকার, বৈকন্ঠ শব্দকর, নিবাস মালা কাদদের মত বাঁশ বেত শিল্পী বা শ্রমিকরা। এক সময় বাঁশ বেত, ছনের ঘরের অত্যন্ত কদর ছিল। গরমের দিনে বাঁশবেত ছনের দ্বারা নির্মিত বসত বাড়ী ঘরের কোন বিকল্প ছিল না। বাঁশ বেতের দ্বারা নির্মিত ঘর ছিল টেকসই এবং দুর্ঘটনা মুক্ত। ঘরের সব সময় হাওয়া সহজে প্রবেশ করতে পারতো ফলে ঘরে গরম কম অনুভূত কম হত। গ্রামগঞ্জের এবং পাহাড়ি এলাকার বাসি ন্দারা বাশ বেত ছনের ঘরে বসবাস করতে বেশি পছন্দ করত।

এক সময়ে গ্রাম পাহাড়ে প্রচুর বাঁশ, বেত পাওয়া যেত। প্রতিটি বাড়ি ছিল বাঁশ বেতের। যুগের সাথে তাল মি লিয়ে এখন কিন্তু আর গ্রাম পাহাড়ের মানুষও বাঁশ বেত বা ছনের ঘর তৈরি করে বস বাস করছে না।বাশবেত ছনের স্থান গ্রহণ করেছে ইট বালু, সিমেন্ট, পাথর কংক্রিট। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মানুষকে পাকা বাড়ি নির্মানে আর্থিক মঞ্জুরি দিয়ে উৎসাহ জাগাচ্ছে। এই সমস্ত কারণ ছাড়াও নির্বিচা রে বন ধ্বংসের জাতকলে বা শ বেত ছনও কবলে পড়েছে। রাজ্যের বনাঞ্চলের বাশ বেত বিভিন্নভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাঁশের দামও বেড়েছে।

ফলে গ্রাম পাহাড়ের মানুষ বাশবেত ছন দিয়ে আর ঘর তৈরি করছে না। ফলে শৈলেন্দ্র মালাকার, নিবাস মা লাকার, বৈকণ্ঠ শব্দকরদের মত কর্মীবা শ্রমিকদের রুটি রোজগারের পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জা না গেছে সারা রাজ্যে এক স ময়ে আড়াই লক্ষ লোক বাঁশ বেতছনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো।সেই সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়ে এখন দশ হাজারের নিচে নেমেছে। যারা রয়েছে তাদের ও আর কাজ মিলছে না। সেই আক্ষেপের কথা শোনালেন শৈলেন্দ্র মালা কার, নিবাসমালাকার, বৈকন্ঠ শব্দকরদের মত বাঁশ, বেত শিল্পী বা শ্রমিকরা। এই সমস্ত শ্রমিকরা অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে।