নয়াদিল্লি, ৩০ এপ্রিল: দিল্লিতে আম আদমি পার্টির (আপ) সরকারের আমলে ক্লাসরুম নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া এবং প্রাক্তন জননির্মাণ দপ্তর (PWD) মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন শাখা (ACB)। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার একটি দুর্নীতি সামনে এসেছে।
ACB-র তথ্যমতে, দিল্লির স্কুলে মোট ১২,৭৪৮টি ক্লাসরুম এবং ভবন নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছে। এই প্রকল্পে আধা-স্থায়ী (Semi-Permanent Structure বা SPS) ক্লাসরুম নির্মাণ করা হয়, যাদের গড় আয়ু ৩০ বছর। কিন্তু এই ক্লাসরুম নির্মাণের ব্যয় ছিল প্রায় স্থায়ী (RCC) কাঠামোর সমতুল্য, যার গড় আয়ু ৭৫ বছর। অথচ SPS নির্মাণে আর্থিকভাবে কোনো স্পষ্ট সুবিধা ছিল না বলে দাবি তদন্তকারীদের।
প্রকল্পটি মোট ৩৪টি ঠিকাদার সংস্থাকে দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে অনেকের সাথে আপ নেতাদের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, প্রকল্পের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে কোনো কাজই সম্পূর্ণ হয়নি। যথাযথ নিয়ম না মেনেই পরামর্শদাতা ও স্থপতিদের নিয়োগ করা হয়েছে, এবং তাঁদের মাধ্যমেই বাড়তি ব্যয় অনুমোদিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সতর্কতা কমিশনের (CVC) চিফ টেকনিক্যাল এক্সামিনার (CTE) ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বহু অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এই রিপোর্ট প্রায় তিন বছর চাপা পড়ে ছিল। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে CPWD Works Manual 2014, GFR 2017 এবং CVC নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে পরবর্তী টেন্ডার-পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলোর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় অপ্রয়োজনে বেড়েছে এবং সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
BJP নেতা হরীশ খুরানা, বিধায়ক কপিল মিশ্র এবং নীলকণ্ঠ বক্সী অভিযোগ করেন যে ১২,৭৪৮টি ক্লাসরুম নির্মাণে ২,৮৯২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে একেকটি কক্ষ নির্মাণের গড় ব্যয় ছিল ২৪.৮৬ লক্ষ টাকা—যেটা দিল্লিতে স্বাভাবিক নির্মাণ খরচের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
CVC রিপোর্টে আরও জানা যায়, SPS ক্লাসরুমের প্রকৃত নির্মাণ খরচ ছিল প্রতি বর্গফুটে ২,২৯২ টাকা, যা স্থায়ী RCC কাঠামোর খরচের কাছাকাছি (প্রতি বর্গফুট ২,০৪৪ থেকে ২,৪১৬ টাকা)। অথচ SPS কাঠামোর উদ্দেশ্য ছিল খরচ বাঁচানো।
২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে এক্সপেন্ডিচার ফাইন্যান্স কমিটি এই প্রকল্প অনুমোদন দেয় এবং জুন ২০১৬-এর মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়। তবুও, পরে চুক্তির মূল্য ১৭ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যার ফলে ৩২৬.২৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় হয়। এর মধ্যে ২০৫.৪৫ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয় শুধুমাত্র উন্নত স্পেসিফিকেশনের জন্য।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই পরিবর্তনের জন্য নতুন করে কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি, যা CVC নির্দেশিকার সরাসরি লঙ্ঘন। তদন্তে জানা গেছে, অন্তত পাঁচটি স্কুলে ৪২.৫ কোটি টাকার কাজ যথাযথ টেন্ডার ছাড়াই পুরনো চুক্তির আওতায় করানো হয়েছে।

